তখনও ২৫ পয়সার লজেন্স পাওয়া যেত, বরফ (আইসক্রিম) পাওয়া যেত। সোনালি সেই ৯০-এর দশক, সোনালি সেই শৈশবের দিন। মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি, কত ঘটনা। এখন শুধু একা একা ভাবি আর মুচকি হাসি। যা যায় তা একেবারেই যায়, আর ফিরে আসে না। জন্মান্তর যদি থাকে তাতে কী লাভ? শৈশব তো আর দ্বিতীয়বার ফিরে পাবো না!

ছোটবেলায় প্রথম দেখেছিলাম, বাজারের ব্যাগ বা ইট রেখে রেশনের লাইন ধরে রাখতে। কোন কাকভোরে বা গত রাতে কে বা কারা লাইন রেখে যেত। সকালে গিয়ে কেমন যেন সব কিছু ম্যাজিকের মতো মনে হত। যত সকালেই যাই না কেন, ১০/১২ জনের পিছনে লাইন। কৈশোরে দেখেছি ক্লাসে পাশে বসার জায়গা রেখে দিতে প্রিয় বন্ধুকে। যৌবনে দেখেছি বনগাঁ বা রানাঘাট লোকালে তাস দিয়ে সিট দখল রাখতে উগ্র মেজাজের নিত্যযাত্রীদের। এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ সবাই।

আজ রবিবার, ০৮/০৮/২০২১। Subhabrata দার বাড়ি বিরিয়ানি খাওয়ার দাওয়াত ছিল আজ। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজন, তার পর কাছেপিঠে কোথাও একটা টোটো করে ঘোরা—এই প্ল্যান। যথাসময়ে আমি যথাস্থানে পৌঁছে গেলাম আমার টাট্টু ঘোড়ায় চড়ে। এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমি সখ করে আমার মোটরসাইকেলের নাম রেখেছি টাট্টু ঘোড়া। বিরিয়ানি খাওয়া হলো, গল্পগুজব হলো, এবার কাছেপিঠে কোথাও যাওয়ার পালা। গন্তব্য ঠিক হলো, স্থির হলো Subhabrata দার গাড়ি করে যাবো আর আমার টাট্টু ঘোড়া রেখে যাবো দাদার বাড়িতে। আবার সন্ধ্যায় ফিরে আমি আমার টাট্টু ঘোড়া নিয়ে আমার ঘরে ফিরবো।

ঘরের চৌকাঠ পার হতে হতে Subhabrata দা বললো, “সঞ্জয়, নিচে আমি গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার পরে তুমি তোমার বাইককে গাড়ির জায়গায় লম্বালম্বি করে রেখে দিও।” আমি কৌতূহলী হয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। Subhabrata দা বললো, গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার পরে, আমরা চলে গেলে যাতে অন্য কেউ ওই জায়গায় গাড়ি না রাখতে পারে তাই এই প্রস্তাব। আমি হোহো করে হেসে ফেললাম।

৯০-এর দশকের সেই রেশনের লাইনে ব্যাগ আর ইটের টুকরো দিয়ে লাইন রাখার কথা মনে পড়ে গেলো। ইস্কুলে পাশে বসার জায়গা রাখার কথা মনে পড়ে গেলো। শিয়ালদহে ট্রেন ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ট্রেনে উঠে সব সিটে তাস ফেলা আছে দেখার কথা মনে পড়ে গেলো। ট্রেনের উগ্র মেজাজের নিত্যযাত্রীদের একপেশে গোঁফ উঁচিয়ে হাসির কথা মনে পড়ে গেলো। আমি গল্প খুঁজে বেড়াই রাস্তাঘাটে, আজ একটা গল্প পেলাম। গল্প লিখতে হবে, সঙ্গে চাই মানানসই ছবি। উপরের বারান্দা থেকে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা Subhabrata দার গাড়ি আর আমার টাট্টু ঘোড়ার ছবি তুলে রাখলাম।

Subhabrata দাকে অনুরোধ করলাম গাড়ির সঙ্গে একটা ছবি তুলতে। যাতে গল্পের মধ্যে প্রতি ধাপে ধাপে লেখার সঙ্গে ছবি দিতে পারি। দাদা নায়কের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লো।

দাদা গাড়ি সরিয়ে রাখলো। আমি যথাস্থানে টাট্টু ঘোড়া রাখলাম। আমি জানি, পাঠকরা বিশ্বাস করবেন না, তাই সেটিরও ছবি তুলে রাখলাম।

সন্ধ্যায় যখন ফিরলাম, তখন দেখলাম আমাদের চক্রান্ত সফল। কেউ টাট্টু ঘোড়া সরিয়ে সেখানে গাড়ি রাখেনি। Subhabrata দা আর আমি একে অপরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলাম। সন্ধ্যায় গাড়ি আবার যথাস্থানে দণ্ডায়মান।

দাদা, লাইনে আছি!
দাদা, লাইনে আছি!

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *