Bannerghatta Biological Park | ব্যানারঘাট্টা বায়োলজিক্যাল পার্ক
২ নভেম্বর ২০১৯ বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক। শনিবার, আজ আমার সাপ্তাহিক ছুটি। গত কয়েক বছর আমি বেঙ্গালুরুতেই আছি কর্ম সূত্রে। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে ভাবছি যে বেঙ্গালুরুতে তো আছি, টুকটুক করে একটু এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালেই তো হয়! কবে বন্ধুরা ঝাঁক বাঁধবে, কবে প্লান করে ঘুরতে যাওয়া হবে এ সব অনেক চেষ্টা করেও হয়নি। সুতরাং কবি গুরুর কথা ও সুরে,
“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে”
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোটা ১টা ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম facebook, whatsapp আর email পড়তে পড়তে। ঘড়িতে দেখলাম ৯:৩০, আর দেরি করা উচিৎ হবে নাহ। বিছানা ছেড়ে উঠে সোজা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। ব্রাশে লাল রঙের ডাবোর লাল দন্ত মাজন বেশ করে লাগিয়ে নিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরলাম। ঘরে ঢুকলাম, দাত মেজে, মুখ ধুয়ে ও স্নান করে। আজ আমাদের গন্তব্য ‘ব্যানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান’ অর্থাৎ Bannerghatta National Park.
ব্যাঙ্গালোর সিটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২৪.২ কিলোমিটার দূরে ব্যানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। পার্কটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৭৪ সালে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল। ২০০২ সালে পার্কটির একটি অংশ জৈবিক রিজার্ভে পরিণত হয়েছিল এবং ব্যানারঘাট্টা জৈবিক উদ্যান নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পার্কটি ৬৫,১২৭.৫ একর যায়গার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে চিড়িয়াখানা, বাচ্চাদের পার্ক, অ্যাকোয়ারিয়াম, কুমির পার্ক, যাদুঘর, প্রজাপতি পার্ক, সাপ পার্ক এবং সাফারি পার্কে ও অন্যান্য আলাদা আলাদা ভাবে ভাগ করা আছে। পার্কের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি হল সিংহ এবং বাঘ বা গ্র্যান্ড সাফারি। এক ঘন্টা সাফারি আপনাকে চিতাবাঘ, সাদা বাঘ, ভল্লূক এবং সিংহ দেখতে সুযোগ দেয়। পার্ক এছাড়াও পাখি বিভিন্ন প্রজাতি বাস করে এখানে। ২৫ নভেম্বর ২০০৬, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী কপিল সিবাল ভারতের প্রথম প্রজাপতির পার্ক উদ্বোধন করেন।
আমাদের যাত্রা শুরু হয় ‘রুপেনা আগরাহারা’ থেকে। প্রথমে ৬০০এফ নম্বর বাস ধরে জায়াদেভা হাসপাতাল। এক দিনে বাসে ঘোরাফেরার জন্য দৈনিক বাস পাস নেওয়াই উত্তম, আমরাও তাই নিলাম। আমরা দুজনে, আমি আর আমার ভাই দুজনেই দৈনিক বাস পাস নিলাম মাথা পিছু ৭০টাকা। দৈনিক পাসের নিয়ম হচ্ছে খুব সহজ, আপনি সকাল সকাল একটি পাস কিনে ফেলুন, এবার সারা দিন সারা শহর সরকারি বাসে করে চোষে বেড়ান, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। পাস নেওয়া খুব সহজ, যেকোনো সরকারি বাসে উঠে কন্ডাক্টর কে মুখ ফুটে বলতে হবে ” আমাকে একটি দৈনিক পাস বা Day Pass দিন। কন্ডাক্টর আপনাকে একটি রংচঙে একটা টিকিট দেবে। এবার আপনাকে নিজের যেকোনো পরিচয় পত্রের সেশের চার সংখ্যা এই টিকিটের উপরে লিখে ফেলে একটা সই করে দিতে হবে, ব্যাস !! আপনার কাজ শেষ। কন্ডাক্টর এবার টিকিট পরীক্ষা করে টিকিটে সেদিনের তারিখ উল্লেখ করে দেবে। জায়াদেভা হাসপাতাল স্টপেজে নেমে বাস বদলের পালা। এখান থেকে MICO Layout / Check Post পর্যন্ত আমরা ৪০০ মিটার একটু হেটে এলাম। সেখান থেকে ৩৬৫পি নম্বর বাসে করে আমরা গেলাম ব্যানারঘাট্টা থানা। তার পর সেখান থেকে আবার বাস বদল করে ৩৬৫ নম্বর বাস ধরে সোজা ব্যানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান। বাস স্ট্যান্ড ব্যানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন।
এবারে ফেলো কড়ি মাখো তেল। চিড়িয়াখানা ও সাফারি একত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৬০ টাকা, কিন্তু শনিবার ও রবিনার উহাই ২৮০ টাকা। আমাদের দুজনের একত্রে ৫৬০ টাকা মাত্র। টিকিট নিয়ে প্রথমে আমরা চিড়িয়াখানা দেখলাম। খুব বড় না হলেও বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কি কি দেখলাম নিচে দেওয়া অ্যালবাম দেখে নিন, লিখে সব বোঝানো যায় না। চিড়িয়াখানা শেষ করে আমরা সাফারির দিকে গেলাম। সাফারির জন্য লম্বা লাইন। লাইনে দারিয়ে হঠাৎ একটা কথা মাথায় এলো। সাফারি ঠিক চিড়িয়াখানার উল্টো, চিড়িয়াখানায় জীব জন্তু খাঁচায় আর মানুষ বাইরে। আর সাফারিতে মানুষ খাঁচার গাড়িতে আর জীব জন্তু খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কি মজার জিনিস। আমাদের কপাল ভালো ছিল, আমারা সাফারিতে রাস্তার পাসে খেলা করা ভাল্লুকের পাল, জঙ্গলের রোদে গা এলিয়ে শুয়ে থাকা অলস সিংহ আর রাস্তার উপরে শুয়ে রাস্তা অবরোধ করা বাঘ দেখতে পেয়েছি। ছোট জলাশয়ের পাসে হাতির পাল, তিরিং বিরিং করে ছুটে যাওয়া হরিণ, বুনো শুয়োর আর রাস্তার পাস দিয়ে হেটে যাওয়া সাদা বাঘ দেখেছিলাম। ছবি আর ভিডিও নিচে দেওয়া আছে, বিশ্বাস না হলে দেখে নেবেন।
সাফারি শেষে আমার প্রজাপতি উদ্যানে ঢুকেছিলাম, এখানে মাথা পিছু মাত্র ৩০ টাকা। এখানে প্রচুর ফুলগাছ ও নানা প্রজাতির প্রজাপতি দেখতে পাবেন। ছোট হলেও খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। এক নিরাপত্তা রক্ষীকে অনুরোধ করে এক ললনা একটি প্রজাপতি হাতে নিয়ে ছবি তুললো আর আমি সেটা দেখে ফেললাম। ললনা চলে গেলে আমি গিয়ে সেই একি অনুরোধ করলাম। প্রথমে কিন্তু কিন্তু করে শেষে আমাকেও সে সুযোগ দিল। আমিও ছবি তুল্লাম, বিশ্বাস না হয় নিচে ছবে দেখে নিন।
এবার বিদয়ের পালা। আমার যে পথে এসেছিলাম, সে পথে আর ফিরলাম না। আমাদের পকেটে আজ আলাদীনের প্রদীপ আছে। প্রদীপ ঘোষে যেকোনো বাসে উঠলেই হল। মন স্থির করলাম, ইলেক্ট্রনিক্স সিটি হয়ে ঘরে ফিরবো। ব্যানারঘাট্টা জাতীয় উদ্যান বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩৬৫ নম্বর বাসে করে এলাম ব্যানারঘাট্টা থানা। তার পর বাস বদল করে ৩৭৮ নম্বর বাসে করে ইলেক্ট্রনিক্স সিটি। এখান থেকে G3 বা ৩৬৫CW বাসে করে আবার ‘রুপেনা আগরাহারা’। এক মন তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরলাম। টাটকা অভিজ্ঞতা লিখে ফেললাম, বাসি হয়ে গেলে আবার জল মেশাতে হত।
সঞ্জয় হুমানিয়া
২ নভেম্বর ২০২০, বেঙ্গালুরু, ইন্ডিয়া