Casio Vintage A158WA-1 স্মৃতি মানেই আমার কাছে শুধু একটি ঘড়ির গল্প নয়—এ এক শৈশব, এক পরিবার, এক সময়ের নস্টালজিয়া। কিছু স্মৃতি এমন থাকে, যেগুলো মনে থাকার কথা নয়, তবু সেগুলো অদ্ভুতভাবে মনে গেঁথে থাকে। মা বলেন, তখন আমি খুবই ছোট। তবু কীভাবে যেন সব মনে আছে—আমি নিজেও জানি না।

🕰️ শৈশবের প্রথম স্মৃতিগুলো

প্রথম পুকুরে স্নান করা, প্রথম ডিমের পোঁচ বানানো, প্রথম ছিপ দিয়ে মাছ ধরা, প্রথম আম গাছে ওঠা, প্রথম বাড়ির ছাদে ওঠা, প্রথম হাটে যাওয়া, প্রথম ইস্কুলে যাওয়া—এই ‘প্রথম’-গুলোর তালিকা যেন শেষ হয় না। আজ ভাবলে অবাক লাগে, এত ছোট বয়সের স্মৃতি কীভাবে এত স্পষ্ট রয়ে গেল!

🏡 রমরমা বাজার আর স্বচ্ছল সংসার

তখন আমাদের রমরমা বাজার। অভাব বলতে কিছুই নেই। গোলা ভর্তি ধান, পুকুর ভর্তি মাছ আর ব্যাংক ভর্তি টাকা। মুদিখানা দোকানে খাতা চলত—সারা বছরের বাজার সেই খাতায় লেখা থাকত। দুই–তিন মাস অন্তর পাওনা মেটানো হতো। হালখাতার সময় আমাদের জন্য থাকত ঢালাও মিষ্টির আয়োজন। আজ সবই স্মৃতি—নামে তালপুকুর, কিন্তু আগের মতো ঘোটি আর ডোবে না।

⌚ হাসেম কাকার সেই আশ্চর্য ঘড়ি

আমি তখন খুব ছোট। ঠিক কতটা ছোট—তা মনে নেই। হাসেম কাকা আমাদের ট্রাকের (লরি) হেল্পার। পাশের পাড়ার মানুষ। ওনার মুখ এখন আর মনে নেই, তবে ওনার হাতে দেখা সেই ঘড়িটি আজও মনে গেঁথে আছে।

সময়টা ছিল নব্বই দশকের শুরু। তখন হাতঘড়ি ছিল প্রয়োজনের জিনিস। হাসেম কাকার ঘড়ির বিশেষত্ব ছিল—ওতে কাঁটা নেই। ইংরেজি সংখ্যায় সময় দেখা যায়। কাঁটা দেখে ৫ দিয়ে গুণ করার ঝামেলা নেই। এক ঝলক তাকালেই বোঝা যায়—কটা বাজে।

🧒 নামতা বনাম ডিজিটাল সময়

আমি তখন ইংরেজি সংখ্যা চিনতাম। কিন্তু কাঁটার ঘড়ি দেখে সময় বলা মানে ছিল ৫-এর নামতা পড়া। আর কোন বাচ্চারই বা নামতা পড়তে ভালো লাগে? তাই হাসেম কাকার ডিজিটাল ঘড়ি আমার কাছে ছিল জাদুর মতো।

বাড়িতে বায়না ধরলাম—হাসেম কাকার মতো ঘড়ি চাই। সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য ওনার ঘড়িটা আমার হাতে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বায়না থামাতে বলা হলো—এটা নাকি বোম্বে থেকে কেনা, লরি আবার গেলে আমার জন্য এনে দেবে। আমি বিশ্বাস করেছিলাম।

পরে একটা ‘মিটারের ঘড়ি’ কেনা হলো—ইংরেজি সংখ্যায় সময় দেখাত, কিন্তু সেটা বাচ্চাদের ঘড়ি। হাসেম কাকার মতো নয়।

🛒 তিরিশ বছর পর স্বপ্নপূরণ

প্রায় ২৮–৩০ বছর কেটে গেল। ২০২২ সালে সেই ঘড়ি এখন ‘vintage’ আখ্যা পেয়েছে। একদিন অনলাইনে হঠাৎ চোখে পড়ল—Casio Vintage A158WA-1। মুহূর্তে স্নায়ু যেন বিদ্যুৎ স্পর্শে সজাগ হয়ে উঠল। চোখের সামনে ভেসে উঠল ছোটবেলার আবছা আবছা দৃশ্য।

ছোট হাতে প্রাপ্তবয়স্কদের ঘড়ি—ঢলঢল করছে। আমি বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে বেড়াচ্ছি, আর খুব সহজে সময় পড়ছি—১২:০৩, ১২:০৪, ১২:০৫, ১২:০৭।

❤️ ঘড়ি ঘড়ি মেরা দিল ধাড়কে!!

হাসেম কাকা হয়তো এখন আর সেই ঘড়ি পরেন না। হয়তো ঘড়িটাও আর ওনার কাছে নেই। কিন্তু আমার স্মৃতিতে সেটা আজও অক্ষত। আজ হাতে Casio Vintage A158WA-1 পরলে সময় শুধু এগোয় না—সময় যেন পিছিয়েও যায়।

ঘড়ি ঘড়ি মেরা দিল ধাড়কে!! Casio Vintage A158WA-1

Casio Vintage A158WA-1 ডিজিটাল ঘড়ি – শৈশবের স্মৃতির প্রতীক

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *