গাইঘাটা ঘূর্ণিঝড় ১৯৮৩ (চড়ুইগাছি)
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার গ্রাম, যেখানে ১৯৮৩ সালে এক দুঃখের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। গ্রামবাসী সম্মুখীন হয় এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের। শুনতে তিনটি পৃথক ঝড়ের নাম মনে হলেও আসলে এগুলো অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়েরই ভিন্ন ভিন্ন নাম। সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস (kyklos) থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুন্ডলী বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। দিনটি ছিল চৈত্র ২৮, ১৩৮৯, মঙ্গলবার, ইংলিশ ১২ এপ্রিল ১৯৮৩। ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব করেছিল উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার অন্তরগত চড়ুইগাছি নামক একটি ছোট্ট গ্রামে। যদিও খাবরের কাগজের শিরোনামে এসেছিল গাইঘাটার নাম। পুরনো মানুষ অনেকেই জানেন আমাদের গ্রামের নাম, তবে আজকাল নতুন মানুষ এ সব ঘটনা শোনেনি। সে যুগে ক্যামেরা বা সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, তাই ছবি আর তথ্য সংরক্ষণ বা প্রচার হয়নি। মুখে মুখে যা ছড়িয়েছিল বা রটেছিল সেইটুকুই।
ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার জন্মের আগে, যা কিছু আমি লিখছি সবই আমার ঠাকুমা, বাবা, মা ও কাকার কাছে গল্প শোনা। ইন্টারনেট তন্নতন্ন করে খুজে আমি বিশেষ কিছু পাইনি। কেবল কয়েকটি সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ আছে যা, কিন্তু বাস্তবটা ছিল আরও কঠিন। সন্ধ্যার সময় ১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার (২৮শে চৈত্র ১৩৮৯) হঠাৎ শোনা যায় শো-শো শব্দ এবং মুহূর্তে মধ্যে গ্রামের অর্ধেক অংশ তছনছ হয়ে যায়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর কালো ছায়া ঢেকে দেয় চড়ুইগাছি গ্রামের উত্তর পাড়ায়। সরকারি সুত্রে ২৮/৩০ জন মানুষ নিহত এবং ৫০০+ আহত হয়েছিলো, কিন্তু বাস্তবে সংখ্যা আরও বেশি ছিল। টর্নেডোটির নাম দেওয়া হয়েছিলো “Gaighata Tornado of 12 April 1983” এবং “north24parganas.gov.in” ওয়েবসাইটে এটিকে 1983 Tornado at Gaighata Development Block বলা হয়েছে। একটি রিসার্চ জার্নালে অনুপম সাহা (Anupam Saha), বি কে দে (B.K De) এবং এস কে সরকার (S.K Sarkar), এই ঘোটনাকে Spectral Characteristics of the Gaighata Tornado of 12 Apr. 1983, issue date Jun-1984, CSIR-NISCAIR এ উল্লেখ করেছেন। এস সি ভট্টাচার্যের লেখা বই Land and People of Indian States and Union Territories তে শুধু মাত্র দুই লাইন লেখা আছে। এই বিষয়ে গ্রামের পুরনো মানুষের কাছে কিছু প্রচলিত ঘটনা শুনেছিলাম, কয়েকটা তুলে ধরলাম।
১) ঘূর্ণি ঝড়ের শেষে দেখা গিয়েছিল নারকেল গাছে তীরের মত বেধে আছে ধান ঝাড়া কুলো।
২) পুকুরের সব জল মাছ শুদ্ধ ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে অন্য ডাঙ্গা জমিতে ফেলে দিয়েছিল
৩) ধানের গোলা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় বসানো, সমস্ত ধান চারিদিকে ছড়িয়ে।
৪) ঘরের মাটির দেয়াল চাপা পড়ে থাকা মৃত দেহ, সঙ্গে ভাতের থালা।
৫) উপড়ে যাওয়া বড় বড় গাছ ইত্যাদি, ছড়িয়ে থাকা টালির চাল, ঘরের জিনিশপত্র।
এমন অনেক গল্প এখনো গ্রামের লোকের মুখে মুখে শুনতে পাওয়া যায়। এই ঘটনা সম্পর্কে আপনাদের কাছে কোনরকম তথ্য থাকলে অবশ্যই যাবেন। কমেন্ট করুন বা ইমেইল করুন। আমার ইমেইল sanjay.humania@gmail.com অথবা i@blog.sanjayhumania.com
এই ছবিগুল আমি সংগ্রহ করেছি রামিজ হুমানিয়া ও সালেক মুফতি এর কাছ থেকে, দুজনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
[foogallery id=”14132″]