Share

গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হাবড়া

সময়টা যতদূর মনে পড়ে ৯০ এর দশক। আমি তখন কচি খোকা, সবে মাত্র বুঝতে শিখেছি নিজেকে এবং এই পৃথিবীকে। আমাদের কাছাকাছি বাজার বলতে ধর্মপুর, (চলতি কথায় ধরমপুর) যেখানে সাপ্তাহিক হাট বসে এখনো, আর শহর বলতে হাবড়া। ঈদের কেনাকাটা, ডাক্তার দেখানো, শীতের সময় বড়ি দেওয়ার জন্য ডাল কেনা আর মাঝে মাঝে ছোট হ্যারিকেনের কাঁচ কেনার জন্য মা অথবা মা বাবা দুজনের সাথে হাবড়া / হাবরা যাওয়া আমার।

আমার কাছে হাবরা যাওয়া মানে ৭৮ (78E) নম্বর কাঠের বাসে করে যাওয়ার সময় কন্ডাক্টরের কাছ থেকে টিকিট নেওয়া, মায়ের কলে বসে লেবু লজেন্স খাওয়া। হাবড়ায় কাজ মিটিয়ে ফেরার সময় গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে হয় লুচি ছোলার ডাল, না হয় সিঙ্গারা চাটনি। শেষে রসগোল্লা বা আপ্যায়ন থেকে ছানার পায়েস। গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার হয়তো এখন আর নেই, হয়তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার কে নিয়ে কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি আছে আমার মনে। এখনকার (২০১৮) হাবড়ার মানুষ হয়তো ভুলেই গিয়েছে গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর কথা। যুব সম্প্রদায় মনে হয় নামও জানে না গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর।

আমার ঠিক মনে নেই গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ঠিক কোথায় ছিল, তবে এটুকু মনে আছে, সোহনলাল তাপুড়িয়ার আশে পাশে কথাও একটা ছিল। রাস্তার উপরে না, রাস্তা থেকে একটা ছোট অন্ধকার গলি দিয়ে ঢুকতে হত, ঠিক যেন একটা বিশাল গুহা। ভিতরে বেশ অনেক বড় জায়গা, ঘরটা মোটামুটি গোল, মাঝখানে সাদা মার্বেলের গোল গোল টেবিল আর সঙ্গে কাঠের চেয়ার। বেশ বড় বসার যায়গা। দই, রসগোল্লা, চমচম, পান্তুয়া, কমলাভোগ, রাজভোগ, ল্যাংচা, ছানার জিলাপি, সিঙ্গারা, লুচি ছোলার ডাল আরও কত কি।

একবার আমার দাদা (দাদু, বাবার বাবা) গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে বালতি করে রসগোল্লা আর পান্তুয়া আনিয়েছিলেন আমাদের বাড়ি। সব থেকে বেশি মনে পড়ে মায়ের সাথে হাবড়া এসে, ফেরার সময় গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে লুচি আর ছোলার ডাল, উফ !! অমৃত মনে হত তখন।

শুনেছি এখন সেখানে মস্ত বড় ইলেক্ট্রনিক্স এর শো-রুম হয়েছে, গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এখন ইতিহাস। এখনকার হাবড়াবাসী কি গণেশ জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার কথা জানে ?

সঞ্জয় হুমানিয়া
৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, ইন্ডিয়া

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★