সেই ছেলেবেলাইয় পড়া, রাজা ও টুনটুনি পাখীর গল্পও। “নাক কাটা রাজারে দেখনা কেমন সাজা রে”!!
অনেক জ্বালাতনের পরে যেটা হয়েছিল –
রাজা বললেন, ‘আন বেটা টুনটুনিকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!’
টুনটুনিকে ধরে আনা হলো।
রাজা বললেন, ‘আন জল!’
জল এল।
রাজা মুখ ভরে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেললেন।
সবাই বললে, ‘এবারে টুনটুনি জব্দ!’
আর সিপাই এসে তলোয়ার নিয়ে রাজা মশায়ের কাছে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে।
টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন, যাতে টুনটুনি বেরুতে না পারে। এদিকে সে বেচারা পেটের ভিতরে গিয়ে ভয়ানক ছটফট করতে লাগলো!
খানিক বাদে রাজামশাই নাক সিঁটকিয়ে বললেন, ‘ওয়াক্।’ অমনি টুনটুনি পেটের ভিতরের সকল জিনিস সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এল।
সবাই বললো, ‘সিপাই, সিপাই! মারো, মারো! পালালো!’
সিপাই তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে পড়লো।
এই গল্প আমার কতবারই তো শুনেছি, কিন্তু আজ যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি সেটাও এক নাক কাটার গল্পও, গল্প হলেও সত্যি। “শ্রীমান স্টিফ রয়” আমাদের এই ঘটনার নায়ক, উনি অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরে কর্ম সূত্রে বসবাস করেন। স্বামী স্ত্রী দুজনের পরিবার, ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। শুধু একটাই সমস্যা, নাক ডাকা সমস্যা ! শ্রীমান স্টিফ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে শুরু হলো, দাম্পত্য কলহ। বিদেশের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি পাঁচ জোড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তঃত একজোড়া দম্পতি নাক ডাকার সমস্যার কারণে রাত্রে বেলায় আলাদাভাবে ঘুমায়; শুধুমাত্র শান্তিতে ঘুমিয়ে রাতটা কাটানোর জন্য।
সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরে এক জরিপ চালানো হয় ১০০০ জন বিবাহিত নারী এবং পুরুষের উপর। এর ফলাফলে দেখা যায় শোবার ঘরে স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার পেছনে কতগুলো অতি পরিচিত কারণ রয়েছে-
১) ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা
২) বালিশ নিয়ে কাড়াকাড়ি
৩) ঘুমের মধ্যে চলাফেরা করা অথবা কথা বলা
৪) ঘুমের মধ্যে হাত অথবা পা এদিক সেদিক ছোড়াছুড়ি করা
আমাদের গল্প হলেও সত্যির নায়ক শ্রীমান স্টিফ রয় এর জীবন এই প্রথম কারণটির জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। জরিপে আরো দেখা যায় উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কারণে শতকরা সাত জন পুরুষ/নারী বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে সঙ্গি/সঙ্গিনীর সাথে রাতে ঘুমানোর সমস্যার কারণে। অতএব সরকারি ভাবে এই সকল পুরুষ বা মহিলাদের নাক কাটার আদেশ দিলেন অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরে মেয়র, এবং এই নাক কাটার সকল খরচা বহন করবে সরকারি তহবিল।
গত বুধবার ২২ মার্চ ২০১৭ তারিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নাক কাটানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। মোট ৪৩২ জনের নাক কাটানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। শ্রীমান স্টিফ রয় ও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওনার স্ত্রী এখন খুব খুশী এই নাক কাটার বিষয় নিয়ে।
নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য রয়েছে ‘অ্যান্টি’ নাক ডাকা মেশিনও। কে কতক্ষণ নাক ডাকেন এবং সেটা কতটা বিপজ্জনক –তা জানা বা পরীক্ষার জন্য জার্মানি এবং উন্নত বিশ্বে রয়েছে বিশেষ যন্ত্রপাতি। নাক, কান এবং গলা বিশেষজ্ঞ আঙ্গেলিকা স্প্যুর্ট বলেন, এই পরীক্ষাগুলোর জন্য রয়েছে বিশেষ ক্লিনিক, যেখানে কমপক্ষে একরাত থাকতে হয় এবং প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমেও এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।