ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর আমার জীবনে যেন এক অদৃশ্য শূন্যতা নেমে এলো। কলেজ থেকে প্লেসমেন্ট পাইনি, আর বাইরে চাকরি খুঁজেও ব্যর্থ। বাড়ির লোকজন ভেবেছিল, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করলেই নাকি মোটা টাকায় চাকরি জুটবে। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম, ডিগ্রি আর বাস্তবের ফারাক কতটা গভীর।
চাকরির মরিয়া খোঁজে এক কাছের আত্মীয়ের শরণাপন্ন হলাম। তিনি তখন একটি নামী তেলের কোম্পানিতে ভালো পদে কর্মরত। সাহস সঞ্চয় করে যখন মনের আশা মেলে ধরলাম ওনার সামনে, তিনি বললেন—CV মেইল করে দিতে। আমি তাই করলাম।
কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম তিনি আমাকে cc-তে রেখে একগুচ্ছ ইমেইল পাঠালেন অনেককে। বুকের ভেতর খানিকটা স্বস্তি জমলো — ভাবলাম, এবার হয়তো কিছু একটা হিল্লে হবে। কিন্তু কয়েক দিন পর অবাক হয়ে দেখলাম, যেসব ইমেইল তিনি ফরোয়ার্ড করেছিলেন, তার প্রায় সবগুলোই ভুয়া ঠিকানায় গিয়েছে—delivery failed। তখনই বুঝলাম, আসলে তিনি আমাকে সাহায্য করার অভিনয় করছিলেন, ওনার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। সেদিনই ভেতরে ভেতরে সম্পর্কটার মৃত্যু ঘটেছিল।
আজ ঈশ্বরের কৃপায় আমি ছোট্ট একটা চাকরি করি। আড়ম্বর নেই, তবু সম্মান আছে। আর যিনি কোনোদিন পাশে দাঁড়াননি, সেই আত্মীয় আজ অবসর নিয়ে বারাসাতে থাকেন। স্কুলের বাচ্চাদের গৃহশিক্ষক।
আমাদের এলাকায় একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেখানে মানুষ নানা সমস্যা ও দরকারের বার্তা শেয়ার করে। একদিন চোখে পড়ল, সেই আত্মীয় হোম টিউশনের বিজ্ঞাপন দিলেন। আমি অ্যাডমিন হিসেবেই সেটি decline করলাম। এখন প্রায় প্রতিদিনই তিনি পোস্ট করেন, আর আমি নীরবে সেই বিজ্ঞাপন বাতিল করি।
জীবন আসলে বৃত্তাকার। সময়ের চক্র ঘুরে যায় ঠিকই। সেই চক্রের নিয়মেই একদিনের অসহায় আমি আজ দাঁড়িয়ে আছি আমাদের দিকে, আর যে মানুষ একদিন আমায় উপহাসের মতো উপেক্ষা করেছিলেন—তিনি আজ দাড়িয়ে আছে ওপর দিকে।
কালচক্র নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ, তবে অসীম ন্যায়বিচারী।
Humania Sanjay | বারাসাত, ২ অক্টোবর ২০২৫




রূপ কথা
বিজয়া দশমীর রাতের গল্প
শামুকের মুক্তি
অভিমানী বাবী
বৃষ্টির দিনে সেই প্রথম
ফেসবুকের অভিনন্দন পত্র
Gaighata Tornado 1983 | গাইঘাটা ঘূর্ণিঝড় ১৯৮৩ (চড়ুইগাছি টর্নেডো)
এক মুঠো অচেনা মানুষ