Share

One day trip to taki

এক দিনের টাকি ভ্রমণ

আমি সাহিত্যিক বা লেখক নই। এখানে আমি কোন ইতিহাস বা ভ্রমণ কাহিনী লিখতে বসিনি। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি নিজের মত করে লিখে রাখি। আশা রাখি না যে ভবিষ্যতে এ লেখা কেউ পড়বে আর বাহবা দেবে। ২০২০ এর শেষে দিকে সারা পৃথিবীর কাছে অতিমারি গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। সকলেই ৭/৫ না ভেবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। লোকাল ট্রেন চলতে শুরু করেছে, হকার ৫ টাকায় বাদাম বিক্রি শুরু করেছে, ১০ টাকায় ৪/৫ টা কমলা লেবুও পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক মিছিল মিটিঙের রমরমা বাজার। এ সময় হাত পা কোলে তুলে ঘরে বসে থাকতে আর ইচ্ছে করলো না।

২৬ সে ডিসেম্বর রাতে সঞ্জীব (বন্ধু) কে ফোনে ধোরলাম। সঞ্জীব জীবনে এই প্রথমবার বিয়ে করেছিলো, লকডাউনের ঠিক আগে। ইচ্ছা না থাকলেও ছেলেটির মধুচন্দ্রিমা বাড়িতেই হয়েছিলো, বাইরে ঘুরতে যাওয়া যাবে না লকডাউনে। ফোন করেই নব বিবাহিত সঞ্জীব কে একটা বোকাবোকা প্রশ্ন করলাম-

> কি রে ঘুমাচ্ছিস?
>> না না এই শুয়ে আছি।
> এত রাতে না ঘুমিয়ে জেগে আছিস কেন?
>> না, এবার ঘুমাবো, তুই কিছু বলবি?
> হুম!
>>মানে, এখনি বলতে হবে? সকালে বললে হবে না?
>না, রে। সকালে বলা যাবে না।

মনে হলো সঞ্জীব উঠে বসলো। আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম-

>বেড়াতে যাবি?
>> এই এত রাতে কোথায় যাবি?
> না না, এখন না। কাল সকালে।
>> কোথায় যাবি?
> টাকি!

কিছুক্ষণ সঞ্জীব চুপচাপ। তার পর বলল,

ঠিক আছে, যাবো। কিন্তু কবে?
> আগামী কাল সকালে।
>> ঠিক আছে, কিন্তু কিসে যাবি?
> ট্রেনে।
>> ওকে, তাহলে কাল সকালে দেখা হচ্ছে। এখন ফোন রাখি।
> ওকে। রাখ।

টাকি ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরের একটি শহর। ১৮৬৯ সালে টাকি পুরসভার প্রতিষ্ঠা হয়। ওই সময়ে টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল জঙ্গলে ভরা। রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী টাকিতে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমান ইছামতি নদীর সে সময়ে নাম ছিল যমুনা-ইছামতী। কৃষ্ণদাসের চেষ্টায় টাকি সম্ভ্রান্ত এবং ব্রাহ্মণ পরিবারের বাসভূমিতে পরিণত হয়। নন্দদুলালের বিগ্রহ স্থাপনের জন্য টাকিতে জালালপুর গ্রামের বেশ নামডাক ছিল। রাজা মানসিংহ প্রতাপাদিত্যের সাম্রাজ্যে আক্রমণ শানানোর জন্য টাকিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দু’পক্ষের লড়াই হয় বসিরহাটের সংগ্রামপুরে। প্রতাপাদিত্যের সৈন্যদলকে তাড়া করে মানসিংহের বাহিনী। টাকি শ্মশানের পাশ দিয়ে ইছামতী পার হয়ে রক্ষা পায় প্রতাপাদিত্যের দলবল। সেই ইতিহাসকে মনে রেখেই শ্মশান-সংলগ্ন রাস্তার নাম পরে রাখা হয় মানসিংহ রোড। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে টাকি কুলেশ্বরী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা হয়। টকিতে ইচ্ছামতী নদীতে দুর্গা পূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশের বেশ কিছু পূজা কমিটি নৌকায় করে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনে অংশ নেয়। এটি টাকির একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। Source:bn.wikivoyage.org

টাকি কলকাতার প্রায় ৭০ কিলোমিটার পূর্বে এবং সড়ক ও রেল উভয়ই দ্বারা পৌঁছাতে পারেন। কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে কলকাতা বাস রুট #২৫২ ধরে হাসনাবাদ যাত্রা। এই যাত্রা পথে বারাসাত এবং বাসিরহাট থেকে টাকি পৌছায় বাসটি। আরেকটি বাস, #৭৯ সি রুটে একটি অনুরূপ পথ অনুসরণ করে কিন্তু এটি এসপ্ল্যানেডের পরিবর্তে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে যাত্রা শুরু / সমাপ্ত করে। যাত্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। টাকি রেল স্টেশন কলকাতা শহরতলি রেলপথের হাসনাবাদ শাখার অংশ। এটি উত্তর কলকাতায় বারাসত রেল জংশন স্টেশনের মাধ্যমে শিয়ালদহ স্টেশনে যুক্ত রয়েছে। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে টাকি পৌচ্ছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে এবং প্রতিদিন কয়েকবার লোকাল ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে টাকি পর্যন্ত যাতায়াত করে। টাকি রোড স্টেশন শহরের স্থানীয় রেল স্টেশনটি টাকি রোড স্টেশন নামে পরিচিত। রিকশা দ্বারা স্টেশন থেকে নদী প্রান্ত পর্যন্ত এবং গেস্ট হাউসে যাওয়ার জন্য ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে।টাকি শহরে কোন বিমাধবন্দর নেই। তবে টাকি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতাতে অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টাকির জন্য বিমান পরিষেবা প্রদান করে। Source:bn.wikivoyage.org

সকাল সাড়ে ৯ টায় বারাসাত স্টেশনে এসে পোঁছালো সঞ্জীব আর সঞ্জীবের অরধাঙ্গিনী। পরিচয় পর্ব শেষ করে আমরা হাসনাবাদ লোকালের জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। যথা সময়ে ট্রেন এলো, এবং আমারা উঠে অন্য দিকের দরোজার পাশে দাড়িয়ে পড়লাম। শুরু হয়ে গেলো আমাদের টাকি যাত্রা। ট্রেনে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। আমারা হেলতে-দুলতে শেষে পৌঁছে গেলাম টাকি। জীবনে এই প্রথম এলাম এখানে।

image source: wikimedia.org

টাকি স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে একটু সামনের দিকে নেমেই দেখলাম রাস্তার ধারে অনেক টোটো দাঁড়িয়ে আছে, আর একটু এগিয়ে যেতেই টোটো চালক এসে ঘিরে ধরলো। ঠিক যেন আমার গুরের ঢ্যালা আর ওরা পিঁপড়ে। সকলের মুখে একই কথা, নদীর ঘাট ফিক্স ভাড়া ২০ টাকা। এক ট্রেন মানুষ কিলবিল করে উঠে পড়লো টোটোয়। প্রতি টোটোয় ৫ জন যাত্রী আর একজন টোটো চালক। আমার স্থান হোলো চালকের পাশে। আমি ইংলিশ ‘S’ এর মত বেঁকে বসলাম। টোটোতে টুম্পা সোনার গান চলছে। চালক বেশ খোস মেজাজে আছে। কিছু পথা চলার পরে চালক কথা শুরু করলো –

> Sirরা কি সাইড সিন করার জন্য গাড়ি ভাড়া করেছেন?
>> দয়া করে Sir বলে লজ্জা দেবেন না, আমি ছাপোষা মানুষ

আমার এই কথা শুনে চালক ফ্যালফ্যাল করে চাইলো আমার দিকে। আমি ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য বললাম –

> না না, গাড়ি নেই। আগে গিয়ে টাকি গেস্ট হাউসে খাবো, তার পর ভাববো।
>> তাহলে আমার গাড়িতেই সাইড সিন করুন!
> এখানে কি কি আছে দেখার জায়গা?
>> প্রচুর জায়গা স্যার
> কত কি নেবে তুমি?
>> স্যার, দুটো সাইট দুদিকে। ‘এদিকে চারশো (₹৪০০), ওদিকে চারশো (₹৪০০)

আমার মনে পড়ে গেলো সত্যজিৎ রায়ের জয়বাবা ফেলুনাথ সিনেমার সেই বিখ্যাত দৃশের কথা।

‌‘আচ্ছা, ‌আপনার ওই হাতের গুলি কি সত্যিই সতেরো (১৭)?’‌‌
‘সেভেনটিন অ্যান্ড হাফ (17 & 1/2)’
—‘বাবাহ!‌’
—‘দেখুন.‌.‌.‌ ফিল করুন’

—‘এদিকে চারশো (৪০০), ওদিকে চারশো (৪০০)

স্নান সেরে গামছা দিয়ে পিঠ মোছার দৃশ্য, লালমোহন গাঙ্গুলির সঙ্গে হালকা রসিকতা করছেন গুণময় বাগচি।

টোটোওয়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলো আমরা যাবো কি না। আমি অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম সংক্ষেপে। গতকাল সন্ধায় অয়নদার দোকানে এই টাকি ভ্রমণের পরিকল্পনা অয়ন দা জানিয়েছিলাম। অয়ন দা বলেছিলেন, টাকি একবার যাওয়া যায়, তেমন কিছু দেখার নেই। তবে আমারা যেন টাকি guest house এই খাই, অন্য যায়গায় খাওয়ার ভালো হবে না। ওনার কথামতো আমরা মধ্যাহ্নভোজন guest house এই করলাম। ভাত, ডা্‌ ফুলকপির তরকারি, বেগুনভাজা আর আমি নিলাম গলদা চিংড়ি, সঞ্জীবরা নিল কাতলা মাছ। পেট ভোরে খেয়ে, ঢেঁকুর তুলে আমার তখন Ready.

প্রথম গন্তব্য নদীর ঘাট ইছামতী তীরে, তার পর নৌকাতে ইছামতী ভ্রমন। ইছামতি নদী হল টাকির প্রধান আকর্ষণেগুলির মধ্যে অন্যতম। নদীতে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, গ্রামাঞ্চলে বা জেলেদের তাদের নৌকা কাজ করার দৃশ্য এই স্থান উপলব্ধ করা হয়। এপার ও বাংলা, ওপার ও বাংলা, কিন্তু ওপারর বাংলা এখন অন্য দেশ। নদীর ঘাট থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে দুই দিকে ঘোরার জন্য, দুদিকের ভাড়া আলাদা আলাদা। আমরা কম ভাড়ার টিকিট কিনলাম। নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করে নিলাম যে যদি ভালো লাগে তবেই অন্য দিকের টিকিট নিয়ে অন্য দিকটাও ঘুরে দেখবো। পাঠকগণ, দেখতেই পাচ্ছেন টিকিটে লেখাই আছে ‘গোলপাতার জঙ্গল’। গোলপাতার জঙ্গল (গোলপাতাবন) (শহরের উত্তরে জালালপুরের দিকে)। গোলপাতা গাছের বন নদীটির দিকে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে ভূখন্ডটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভেবেছিলাম হয়ত জঙ্গল দেখাবে, হয়তো কপালে থাকলে বাঘও দেখতে পাবো। কিন্তু হায়, বাঘ ছাড়ুন কপালে গোলপাতা পর্যন্ত জুটলো না। লঞ্চ চালক একজন অতি কর্কশ মানুশ, ব্যাবহার অতি জঘন্য। ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালেই খিস্তি মেরে বসিয়ে দিচ্ছিলো। ৫ মিনিটের মধ্যে নদীর বুকে ঘুরিয়ে আবার U turn নিয়ে লঞ্চ ঘাটে ফেরৎ। টিকিটেই শুধু ঘটা করে লেখা ‘গোলপাতার জঙ্গল’, আসলে সব লোক ঠকানো ব্যবসা। টুরিস্টদের ঠকিয়ে ধমকিয়ে খিস্তি মেরে এদের দিন চলে।

দ্বিতীয় attaction মাছরাঙা দ্বীপ। ইছামতি ও ভাসা নদীগুলির মিলনস্থল কাছাকাছি অবস্থিত মূলত একটি নির্জন দ্বীপ। এটি একটি চমৎকার স্থান, যা হাঁটা, সাঁতার এবং পাখি দেখার জন্য আদর্শ্য স্থান। নৌকায় প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং এই পথে জমিদার রায়চৌধুরীর বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে নদী দ্বারা গ্রাস হচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, লঞ্চ চালক আমাদের কে এখানে নিয়ে জায়নি।

যাই হোক, খিস্তি হজম করেও আমারা ছবি তুললাম। কিছু দাড়িয়ে, কিছু বসে আর কিছু হামাগুড়ি দিয়ে। টাকি লঞ্চ ভ্রমণ এই এলাকার মানুষের প্রতি আমার মনে তিক্ততা ঢেলে দিলো। অয়নদা ঠিকই বলেছিলেন, তেমন আহামরি কিছু নেই টাকিতে।

The gallery was not found!

প্রথম দফার ভ্রমণ শেষ। লঞ্চ থেকে নেমে আবার নদীর ঘাটে গেলাম। এখানে একটি watch tower আছে, এটির নাম বিধান সৈকত টাওয়ার। এখান থেকে নাকি ইছামতী আর বাংলাদেশ দর্শন করা যায়, টিকিট মাথা পিছু মাত্র ১০ টাকা।

৩০ টাকার জলাঞ্জলি দিয়ে নোংরা watch tower এ উঠলাম। এখান থেকে আমারা বঙ্গবসাগর ও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা দর্শন করলাম। ৫ মিনিটের মধে নিচে নেমে টিকিট বিক্রেতাকে কিছু modified ভদ্র খিস্তি উগরে দিলাম যা আমারা লঞ্চ চালকের কাছ থেকে খেয়েছিলাম। এবার আস্তে আস্তে আমার সত্যি মনে হতে শুরু করেছিল যে এখানে সবাই ঠকবাজ। ৩০ টাকা উসুল করতে কিছু ছবি তেলেছিলাম, নিছে সেগুলি দিয়ে রাখলাম। ইচ্ছে হলে zoom করে দেখবেন।

The gallery was not found!

দ্বিতীয় দফার ভ্রমণ পরিকল্পনা শুরু হয়েছিলো ফুচকা খেতে খেতে। ফুচকাওয়ালা কে ঠকবাজ মনে হলো না, আমাদের বয়সের একটি মিষ্টি ভাষী ছেলে। কথাবাত্রা বলতে বলতে টাকি ঘুরে দেখার কথা উঠলো। ছেলেটিই একটি টোটো ঠিক করে দিলো। এদিকে চারশো (₹৪০০), ওদিকে চারশো (₹৪০০) হয়ে গেল ₹২৫০+₹২৫০=₹৫০০। আমরা তো কৃতজ্ঞতায় গদোগদো হয়ে দু-round ফুচকা খেয়ে ফেললাম। মারাঠি ভাষায় ভালো মানুষকে ওরা ‘দেব মানুষ’ বলে, আমাদের তখন এই ফুচকাওয়ালা কে দেব মানুষ মনে হয়েছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম টোটো ভারা করে, টাকির এদিক ওদিক পরিদর্শনে। দেখলাম পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা ‘বিসর্জন’ এর সেই বাড়িটি। বাড়ি ফিরে আমাকে google search করতে হয়েছিলো এই বিখ্যাত যায়গাটি সমন্ধে। এটি এখন টাকির অন্যতম আকর্ষন, টাকিবাসীর মতে। আমার তেমন আহামরি কিছু মনে হলো না। অন্য টুরিস্টরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে যে অবিকল ছবির সাথে মিলে যাচ্ছে ‘বিসর্জন’ এর সেই বাড়িটি। বাড়ির সামনে মাছির চাষের বাক্স বসানো ছিল। আবার যাত্রা শুরু, পথে যেতে যেতে অনেক প্রাচীন মন্দির আমাদের চোখে পড়লো। শহরের চারপাশে কয়েকটি পুরানো মন্দির ( রামকৃষ্ণ মন্দির, জোড়া শিব মন্দির ও কুলেশ্বরী কালিবাড়ি/কুলের কালি বাড়ি) রয়েছে যেখানে আপনি সন্ধ্যায় প্রার্থনা এবং আরতিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। দেখলাম টাকির প্রথম হাতে ঘোরানো কল ৷ এই জলই এখানকার মানুষ খেতো ৷ দেখলাম রায়চৌধুরীর জমিদার বাড়ি (ইছামতি নদী পাশে, শহরের উত্তর)। সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী এর পৈতৃক বাড়ি। প্রাঙ্গনের কাছে পুরানো নাটমন্দির মন্দির রয়েছে। আরও দেখলাম মিনি সুন্দর বন, এটি বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা। এখানে ক্যাম্প নেই, এখানে ছোট ছাউনি করে BSF চৌকি দেয় ৷ ক্যাম্প  আছে সৈয়দপুরে BSF  ক্যাম্প ৷ এবার চলে এলাম নদীর মোহনায়, যেখানে তিনটি নদী, কালিন্দী, বিদ্যাধরি আর ইছামতি এসে মিশেছে। চোখে পড়লো ইটভাটা আর তার বিশালাকার চুল্লী। ঘুরতে ঘুরতে আরো অনেক ছবি তুলে ফেললাম, নিচে একসঙ্গে ছবি গুলি দিয়ে দিলাম।

ফেরার পথে আর টাকি ফিরলাম না। টোটোওয়ালা বললো হাসনাবাদ station ওখান থেকে কাছে হবে। আমারা ওনাকে হাসনাবাদ station পউছে দিতে বললাম। এবার টোটোওয়ালা গিরগিটির মত রঙ বদলালো। বলল, কথা হয়েছিলো এদিক ওদিক ঘুরে টাকি নদী ঘাটে নামাবার। এবার যদি হাসনাবাদ station যেতে হয় তাহলে extra মাথা পিছু ২০ টাকা করে অর্থাৎ ৬০ টাকা দিতে হবে। আমরা বললাম, টাকি যেতে যে পথা তার থেকে হাসনাবাদ station তো কাছে, তাহলে extra কেন দেবো? উনি বললেন, বেশি কথা বাড়াবেন না, extra দিলে হাসনাবাদ station নিয়ে যাবে আর না দিলে নদী ঘাটে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে আবার টোটো করে আমাদের টাকি station যেতে হবে, সময় বেশি লাগবে। শেষমেশ আমারা হাসনাবাদ station নিয়ে যেতে বললাম, ৬০ এর যায়গায় ৫০ এ উনি রাজি হলেন।

বাড়ি ফিরে ভেবে দেখলাম, টোটো ভাড়া ওইটুকু ঘুরে দেখার জন্য ৫৫০ টাকা অনেক বেশি। পাঠকরা টাকি যাওয়ার আগে অন্তত ১০ বার ভেবে দেখবেন। তার পরেও যদি ইচ্ছে হয় যেতে পারেন। তবে সাবধান, পায়ে পায়ে ঠকবাজ পাবেন। শহরের মানুষদের জন্য টাকি ভ্রমণ ঠিক আছে, তবে আমার মত গ্রামের মানুষের জন্য টাকি নয়। তবুও একদিনের ঘোরার জন্য ঠিক আছে। যাদের নিজস্ব গাড়ি বা বাইক আছে, তাদের জন্য উপযুক্ত। এখানেই টাকি ভ্রমণের অভিগতা শেষ করলাম। এই লেখাটির মধ্যে অনেকটি অংশ bn.wikivoyage.org থেকে নিয়েছি এবং সেই অংশের নিছে উল্লেখ করে দিয়েছে, যাতে আমাকে কেউ লেখা চোর না বলতে পারে। লেখায় অসংখ্য বানান ভুল আছে, চোখে পড়লে কমেন্ট করবেন।

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★