বেশ কয়েক মাস থেকে আমার মধ্যে একটা খাই খাই ভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সকাল দুপুর সন্ধায় শুধু খিদে পায়। আর খাওয়ার পরেই কুমিরের মতো পড়ে থাকি বিছানার উপরে। শরীরটাও তো একটা যন্ত্র, যন্ত্রণা তো দেবেই। শুরু হোলো খাবার হজম না হওয়ার অসুখ। উড়ে গেলো মনের সুখ! পেট ভোরলেও মন ভরে না। খাই খাই ভাব তো আসলে পেটের না, ওটা তো মনের অসুখ। খালি পেটে নাই খেদ বেশি খেলে বাড়ে মেদ, আমারো তাই।
আমার প্রিয় হজমের ওষুধ হোলো Astro Pharmaceuticals এর Aristozyme Liquid. যেমন স্বাদ তেমন কাজ। বিড়াল ডিঙিয়ে যেতে পারবে না এমন এক থালা ভাত খেয়ে মাত্র এক চামচ Aristozyme Liquid, আর কোন চিন্তা নেই। ঠিক ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরেই আপনার খিদে পাবেই পাবে। আবার মন ভরে হাউ মাউ খাউ।
যেদিন আমার মন খুব খারাপ থাকে বা যে দিন আমি অবসাদে ভুগি, আপিস থেকে ফেরার পথে লাল মাংস বা মুরগি কিনে আনি। মন দিয়ে রান্না করি, রান্না হয়ে গেলেই গরম গরম তাড়াহুড়ো করে খেয়ে, Sunday suspense শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। কয়েক মাস ধরে আমারা প্রায়ই মন খারাপ হচ্ছে বিনা কারনে।
আজ Aristozyme কিনতে বেরিয়েছিলাম। কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে আনমনা ভাবে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটছি। ইলেকট্রিক খুঁটির নিচে একজন পাগল মতো লোক বসে আছে দেখলাম। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম রাস্তার ধারে একটা স্টিলের ছোট থালা পড়ে আছে আর সেটি একটি প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে হয়তো লোকটির কোমরের সাথে বাঁধা আছে। ময়লা জামার নিচে দিয়ে প্লাস্টিকের দড়ি বেরিয়ে আছে।
মনে খটকা লাগলো। থালা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা কেন? ঘুরে আবার চার পা পিছিয়ে গেলাম কৌতূহল মেটাতে। মানুষটির কাছে গিয়ে বুঝলাম উনি পাগল নন। উনি একজন অন্ধ মানুষ। পাশে রাখা আছে ভাজ করে নেওয়া অন্ধের লাঠি। রাস্তার পাশে ইলেকট্রিক খুঁটির নিচে ধুলোয় আলোআঁধারিতে বসে আছে এক আঁধার জগতের মানুষ। কাঁধে একটা ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ যা তার পাসেই পড়ে আছে। গলায় একটা ট্যাগ দিয়ে ঝোলানো UPI এর QR code.
বুঝলাম, উনি আর্থিক সাহায্যের জন্য এই থালা নিয়ে বসে আছে। ওনাকে ভিক্ষারী ভাবতে মন চাইলো না। ওনাকে দেখে আমার মন খারাপ ও অবসাদ কপ্পুরের মতো উবে গেলো। মন ভালো হয়ে গেলো। এটাই তো জীবন সংগ্রাম, এটাই তো বেঁচে থাকার লড়াই। ওই মানুষটির সামনে মন খারাপ করে অবসাদে থাকা বিলাসিতা।
ওনার সামনে নিচু হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, UPI এর QR code চলে কি না। উনি দু হাতে গলায় ঝোলানো UPI এর QR code আমার সামনে তুলে ধরলেন আর হাসিহাসি মুখে হ্যাঁ বললেন। আমি স্কান করে সামান্য আর্থিক সাহায্য করলাম। ফোনে টুং আওয়াজ শুনে উনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কত পাঠিয়েছি। আমি বললাম। উনি হাত দুটো নমস্কার করে একটা স্নিগ্ধ হাসি মাখা মুখে জানালেন, “Thank you sir”.
ইচ্ছা করেই লেখার জন্য ছবি তুললাম না। সত্যি বলতে ছবি তুলতে ইচ্ছে করলো না। আজ অনেক দিন পরে একটা গল্প কুড়িয়ে পেলাম রাস্তার ধারে। এমনি হাজার হাজার গল্প আমাদের চারপাশে হেঁটে চলে বেড়ায়। হয়তো আমারা ভালো স্রোতা হয়ে উঠতে পারি না বলেই সেই সব গল্প শুনতে পাই না। মানুষ তো শুধু মানুষ নয়, সবাই এক একটি গল্প।
সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
১৫ই মার্চ ২০২৩
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★