Share

ফেসবুকে সব পাওয়া যায়, প্লাস্টিকের বাঁধাকপি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ওষুধ

ছোটবেলায় পরীক্ষার খাতায় রচনা লিখেছিলাম, “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ”। খুব সুন্দর করে উভয় পক্ষের হয়ে উদাহরণ দিয়ে লিখেছিলাম। মানুষের ব্যাবহারের আর ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে, যে বিজ্ঞান কে কি রূপে আমরা দেখতে চাই। আজ যে কারনে এই প্রবন্ধটি লেখা, অনেকটা সেই একই কারনে। সোশ্যাল মিডিয়া আশীর্বাদ না অভিশাপ? মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমি কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে চাই। খবরটি অবশ্যই আপনার চোখে পড়েছিল কিম্বা whatsapp বা ফেসবুকে সেই পরিচিত ভিডিওটি আপনি অবশ্যই দেখেছিলেন। প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে বিতর্ক আগেই তৈরি হয়েছিল। প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে মানুষের মনে আগে থেকেই আতঙ্কের বীজ ছিল, আর ঠিক সেই সময় গত বছর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলো। কোন এক জন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি পোস্ট করেছিল, ভিডিওটিতে তিনি দেখাচ্ছেন তাঁকে দোকান থেকে প্লাস্টিকের বাঁধাকপি দেওয়া হয়েছে। এবং বাঁধাকপিটি যে প্লাস্টিকেরই, তা তিনি প্রমাণ দিচ্ছেন। এবং সঙ্গে আর একটি ভিডিও, যাতে দেখা যাচ্ছে এক জোড়া হাত কীভাবে সেই প্লাস্টিকের বাঁধাকপি তৈরি করছে। ইদুর দৌড় এর মত আমরাও লাইক ও শেয়ার করে দিলাম। একবারও ভেবে দেখলাম না কয়েকটি অতি সাধারণ ব্যাপার।

যে দেশ কৃষি প্রধান, যে দেশে সব্জির বিক্রি দাম না পেয়ে চাষি আত্মহত্যা করে, যে দেশে বাঁধাকপি বেশী উৎপাদন হলে দাম কমে যায় আর সব শেষে বিক্রি না হলে গরুর খাবার হয়ে যায়, সেই দেশে প্লাস্টিকের বাঁধাকপি বিদেশ থেকে কীভাবে আসবে? এখানে আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলি। কোন একবার ইস্কুলের ফাইনাল পরিক্ষার পরে ছুটিতে আমি আমার মেজ পিসির বাড়ি গিয়েছিলাম। পিসির বাড়ি নগরউখড়ার কাছে, জেলা নদীয়া। পিসতুতো ভাই আমার থেকে বেশ বড়, পেশায় ট্র্যাক্টর ড্রাইভার। নিজেদের ট্র্যাক্টর, চাষের সময় অন্যর খেত চষে দেওয়াই ওর প্রধান কাজ। একদিন সকালে আমাকে সঙ্গে নিয়ে একটা খেত চাষ করতে গেলো। খেতে গিয়ে দেখি, খেতের অর্ধেক অংশে বাঁধাকপি গাছ এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে। খেতের মালিক বললো চষে দাও খেত, আমরা বললাম এই সব কপি তো নষ্ট হয়ে যাবে। উত্তরে খেতের মালিক বলেছিল, কেনার লোক নেই আর গরুও খতে চাইছে না। কোল্ড স্টোরে রাখলে খরচার দাম উঠবে না। দুটো ভালো দেখে বাঁধাকপি আমরা বেছে নিয়ে ট্র্যাক্টর দিয়ে খেত চষে দিয়ে ছিলাম বাঁধাকপির উপর দিয়েই।

জাপানে রেস্তোরায় কৃত্রিম খাবারের নমুনা বানানো হয়। এটি একটি স্বতন্ত্র পেশা, বিশেষজ্ঞরা আসল খাবারের মত অবিকল কৃত্রিম খাবার বানাতে পারে। এটা মোমের গুঁড়া থেকে তৈরী যা গ্রাহকদের জন্য নমুনা হিসাবে রাখা হয় শুধুমাত্র প্রদর্শনীর জন্য। “জাল খাদ্য” শব্দটি শুনেই আপনি খাদ্য জালিয়াতি সম্পর্কে মনে করবেন। জাপানিরা এটিকে “শোকিন নমুনা” অর্থাৎ “খাবার নমুনা” বলে। খাবার নমুনা বা নকল খাবার তৈরি করার শিল্পটি অনেক পুরনো, সেই 1917 তে আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জাপানে অনেক রেস্তোরায় খাবারের মেনু কার্ডের বদলে থাকে এই মোমের তৈরি খাবার নমুনা বা নকল খাবার। এই খাবার শুধুমাত্র প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। ভারতে এমনিই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখানো হচ্ছে যে মোমের বাঁধাকপি কেমন করে বানানো হয়। এবং ভিডিওর সাথে বলা হয়েছিলো যে, চিন প্লাস্টিকের বাঁধাকপি বানিয়ে আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে আর তা আমদের দেশের সব্জি বিক্রেতারা আমাদেরকে বিক্রি করছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আমার অনেক অজানা তথ্য পাই আবার নিজের অজান্তে গুজব বিশ্বাস করে নেই। একটুও ভাবি না যে গুগোল নামক একটা ফ্রি সার্চ আছে ইন্টারনেটে, যেখানে সব কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়া কে সঠিক পথে ব্যাবহার করলে আশীর্বাদ আর অসৎ ভাবে ব্যাবহার করলে অভিশাপ।

সূত্র : kotaku.com