প্রথম দীঘা ভ্রমণ
আমার প্রথম ভ্রমনের অভিজ্ঞতা লিখতে বসলাম প্রায় দেড়/দুই দশক পার করে। আলোআঁধারি স্মৃতি কে আশ্রয় করে লেখা এই ভ্রমণ অভিগতা। কিছু ঘটন মনে আছে, আর কিছুটা আবছা। পুরোনো স্মৃতি বা ঘটনা লিখতে বসলে এই একটাই সমস্যা, একটু আধটু জল মেশাতেই হয়। টাটকা ঘটনা হলে আমি জল মেশাই না, ৯৯% খাঁটি থাকে।
আমি যে তখন কোন শ্রেণীতে পড়তাম সেটাই মনে নেই। ছবিতে আমাকে বেশ খোকা খোকা লাগছে। পাঠকদের কাছেই ছেড়ে দিলাম, আমার বয়স ও আমি কোন শ্রেণীতে পড়তাম সেটা অনুমান করে নেওয়ার। বাড়িতে হথাৎ একদিন কথায়-কথায় কোথাও একটু বেড়িয়ে আসার কথা উঠলো। ততদিন আমার কাছে বেড়ানোর জায়গা বলতে মামা বাড়ি আর মাসি পিসির বাড়ি। স্কুল ছুটি হলেই এই তিনের মধ্যে কোনো এক যায়গায় গিয়ে কিছু দিনের ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসা। কিন্তু সেবার আব্বা (বাবা) বললো,
“চলো এবার আমরা সবাই মিলে দীঘা ঘুরে আসি!”
বাড়িতে সকলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। যে সময়ের ঘটনা এটা, তখন আমরা সদ্য বারাসাতের নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করেছি। তখনো আমাদের অর্থনৈতিক আবস্থা সচ্ছল ছিলো। আমার মামাবাড়ির পাড়ার লোক নানাজি কে বলতো,
“তোমার অমুক জামাইতো ছোটোখাটো একজন জমিদার!!”
সেবারের দীঘা ট্যুরে আমাদের একটা বড়ো ভূমিকা ছিলো। আত্মীয় ও অনাত্মীয় মিলিয়ে বেশ একটা বড় দল তৈরি হলো। যাওয়া আসার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আমাদের। সেবার দিঘা ট্যুর আমারা গিয়েছিলাম আমাদের ট্রাকে। তিরপল দিয়ে ট্রাকের পিছন সুন্দর করে ছাউনি করে সকলে শুয়ে বসে পৌঁছে গিয়েছিলাম নিউ দীঘা। পথের তেমন কোন স্মৃতি আমার মনে নেই। এটুকু শুধু মনে আছে, কোলাঘাটের কাছে একবার আমার দাঁড়িয়েছিলাম। পারাতুত ছোট মামা আমাকে ডিম টোস্ট খাইয়েছিলো।
আব্বার মুখে শুনেছিলাম, আমাদের ড্রাইভার রাতে কোন এক সময় একবার ঘুমের ঢুলুনি দিয়েছিলো ট্রাক চালাতে চালতে। আব্বার চোখে পড়া মাত্রই ট্রাক থামিয়ে, বাকি পথ টুকু আব্বাই চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
ভোর ভোর আমারা পৌঁছেছিলাম দীঘা। ঝাউ বনে ট্রাক থামিয়ে ছাউনি তৈরি হয়েছিলো। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে বিশ্রামের ব্যবস্থাও হয়েছিলো। সকালের জলখাবার লুচি তরকারি, দুপুরে মাংস ভাত। স্নান ও ছবি ওঠানোও হয়েছিলো। সময় কেটেছিলো হুহু করে। দেখতে দেখতে বিকাল, আর তার পরে সন্ধ্যা। সে রাতেই আবার ফিরেছিলাম আমার। বাড়ি পৌঁছেছিলাম সেই ভোর ভোর। জীবনের এই প্রথম ভ্রমণ, এই প্রথম বাইরে কোথাও চড়ুইভাতি। গ্রুপ ছবির বহু মানুষ কে আমার আজ হারিয়ে ফেলেছি। পড়ে আছে কিছু মিষ্টি স্মৃতি আমাদের মনের কোণে। জীবনের পথ চলার এতাই মূল জীবনশক্তি।
সঞ্জয় হুমানিয়া
৩০ জুলাই ২০১১ (হায়দ্রাবাদ)
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★
[foogallery id=”7661″]