Share

পাফ প্যাটিসের গল্প | Story of puff patties

আমি অনেক কিছু জানি না, অনেক কিছু চিনি না, অনেক কিছু দেখিনি, অনেক কিছুই খাইনি। এই ধরুন প্রথম কবিরাজি খেয়েছিলাম ২০১৭-১৮ তে দমদমের বিখ্যাত মিত্র ক্যাফেতে, প্রথম ধোসা খেয়েছিলাম ২০০৯ এ লিলুয়ার এক অখ্যাত রেস্তোরায়, প্রথম আরসালান আর আমিনিয়াতে বিরিয়ানি খেয়েছিলাম ২০১০ এ, প্রথম ফিস ফ্রাই আর কাটলেট খেয়েছিলাম ২০১৪র বইমেলাতে, সম্পূর্ণ লিস্ট বলতে গেলে লেখা লম্বা হয়ে যাবে এবং আপনি পড়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।

আজকের স্মৃতিচারণ লিখতে বসেছি আমার কৈশোরের এক মিষ্টি স্মৃতি। তখন আমি নবম বা দশম শ্রেণীতে পড়ি, অংক আর কেমিস্ট্রি পড়তে যেতাম রমেন কুণ্ডু স্যারের কাছে। সন্ধ্যায় স্যার নিজের বাড়িতে পড়াতেন, স্যারের বাড়ি বারাসাত কলোনী মোড়ে। স্কুলের এক সহপাঠী আমাকে প্রথম সেই দোকানটি চিনিয়েছিল। আমি ২০০১ বা ২০০২ এর কথা বলছি, তখন কলোনি মোড়ে ‘Protina Stores’ নামে একটি ছোট্ট দোকান ছিলো, এখন হয়তো সেটি অনেক বড় হয়ে ‘New Protina Stores’ হয়েছে। দোকানটি কেক,পেস্ট্রি,প্যাটিস, চকলেট, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি বিক্রি করতো।

আমি আমার জীবনের প্রথম চিকেন ও মটন প্যাটিস খেয়েছিলাম এই দোকানে। সেই সময় চিকেন ও মটন প্যাটিসের দাম ছিল ১২-১৪ টাকা। বেশ বড় চৌক চিকেন ও মটন প্যাটিস সুন্দর করে চার টুকরো করে কেটে একটি শালপাতার বাটিতে সাজিয়ে নিত, তার পর তার উপরে টমেটো শশ ও চিলি শশ পরিমাণ মত, তার পর শসা পেয়াজ ছড়িয়ে দিয়ে হাল্কা করে বিটলবণ। নেশা লেগে গিয়েছিলো সেই সময়, প্রত্যেক দিন যেদিন যেদিন পড়া থাকতো, নিয়ম করে আমি আর সমরেন্দ্র পাণ্ডা এই চিকেন ও মটন প্যাটিস খেতে যেতাম। একদিন ও খাওয়াতো পরের বার আমি খাওয়াতাম। তবে বেশীরভাগ সময় সমরেন্দ্রই আমাকে খাওয়াতো। এখন বলতে লজ্জা নেই, সেই সময় আমি হাতে বিশেষ টাকা পয়সা পেতাম না। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা pocket money পায় না, মাঝে মধ্যে অনিশ্চিত ভাবে ১০-২০ টাকা পেয়ে যেতাম।

একদিন হঠাৎ করে Protina Storesএ যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। সেদিন খুব রাগ হয়েছিল সেই চশমা পরা কাকুটার উপরে। এতদিন যার দোকানে মহা তৃপ্তিতে আমি আর সমরেন্দ্র চিকেন ও মটন প্যাটিস খেতাম সেদিন মনে হয়েছিল যে কি ঠকা নাই ঠকেছি দিনের পর দিন। সেই একই চিকেন প্যাটিস সেই একই সাইজ সেই একই টেস্ট, কিন্তু দাম অনেক কম!! মাত্র সাড়ে ৭ টাকা! ভাবা যায়? ৫ টাকা কম!! এই নতুন প্যাটিসের দোকানটি চাপাডালিতে Sangita Xerox Center এর ঠিক পাসে ছিল। কয়েক বছর পড়ে যদিও দোকানটি মোবাইল ফোনের দোকান হয়ে গিয়েছিলো। বেশ কিছুদিন এই দোকানের চিকেন প্যাটিস খেয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেটাই Protina Stores এর প্যাটিস কে miss করতে শুরু করেছিলাম। কারণ এখানে শুধু প্যাটিস খেতে হতো, না ছিল শালপাতা না ছিল শসা পেয়াজ আর না ছিল শশ। এখানে খাবরের কাগজের ঠোঙ্গায়  প্যাটিস ভরে হাটে ধরিয়ে দিতো।

কয়েক বছর আগে কিছু কাজে Protina Stores এর সামনে দিয়ে হেটে যেতে যেতে পুরনো স্মৃতি মনে পড়েছিলো। উকি মেরে দেখলাম সেই চশমা পরা কাকু নেই, একজন অল্প বয়স্ক অন্য কেউ ছিল দোকানে। অনেকটা স্মৃতির টানে দোকানে গিয়ে আমি চিকেন প্যাটিস চাইলাম। “সকালের প্যাটিস পাওয়া যায় না” বলেন  দোকানদার। সেই চশমার উপর দিয়ে দেখা কাকুর মিষ্টি মিষ্টি হাসি মুখ খুব মিস করেছিলাম, তার সঙ্গে মিস করেছিলাম সুন্দর করে চার টুকরো করে কেটা প্যাটিস, শালপাতার বাটি, টমেটো শশ ও চিলি শশ, শসা পেয়াজ আর হাল্কা করে বিটলবণ।

বহু বছর কেটে গেলো, এখন ২০২০ বেঙ্গালুরু। প্যাটিস আমার পিছু ছাড়েনি, এখানে নতুন নামে আমাকে লোভ দেখায়। এখানে উনি ‘পাফ’ নামে পরিচিত। ভেজ পাফ, এগ পাফ, চিকেন পাফ। তবে এখনো মিস করি সেই Protina Stores এর প্যাটিস। সেই স্বাদ এখনো যেন মুখে লেগে আছে।

সঞ্জয় হুমানিয়া
১০ অগাস্ট ২০২০, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, ইন্ডিয়া

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

পাফ প্যাটিসর গল্প | Story of puff patties
পাফ প্যাটিসর গল্প | Story of puff patties