রাতের আলেয়া
আমাদের গ্রামের নাম চড়ুইগাছি, ঠিক উল্টো দিকে নাইগাছি গ্রাম, পাশের গ্রামের নাম মেটেগাছি। আমাদের গ্রাম ছেড়ে পূবে নামলেই খোলা মাঠ, দু’ফসলা জমি। গ্রামের উত্তর দিকে গোপালপুর, গোপালপুর ঘুরে নাইগাছি হয়ে মেটেগাছি দিয়ে মাঠে নামর একটা লাল ইটের রাস্তা ছিল, এখন হয়তো পাকা হয়েছে। মাঠ মানে বিলে, তিনগুন রাস্তা ঘুরে বিলে নামার এই একটাই রাস্তা, আর তা হলে ধানের জমির উপর দিয়ে আমাদের গ্রামের পূবে সোজাসুজি হেটে গেলেই সেই বিল। সমস্ত বিল চোঁচড়া আর নাড়ার গোঁড়ায় গজানো ধানগাছে ভরা গ্রীষ্মকালে। বর্ষা কালে এই বিল প্রতিবার ডুবে যায়, জল থাকে বেশ কয়েক মাস। তখন মাঠের এই অংশ পচা জলাভূমি। কাদা ঘেটে মাছ ধরার যে কি আনন্দ, যে ধরেছে সেই জানে। বিশেষ করে পাঁকাল মাছ। কাদা কেটে পাঁকাল ধরার আনন্দই আলাদা। জল যত কমবে, পাঁকাল মাছ তত পাঁকের মধ্যে সেঁদিয়ে যাবে। জল সেচা শেষ হলে পাঁকের উপর চ্যাং, উলকো, শিঙি, মাগুর, নরম ঝোল কাদায় ভেসে উঠবে। কিন্তু পাঁকালের দেখা মিলবে না। বাঁহাতের পাঁচ আঙুলের ফাঁকে ডান হাতের পাঁচ আঙুন চালিয়ে কোদালের ফলার মত পাঁক-কাদা কাটো, পাঁকালগুলো বেরিয়ে আসবে। মজার ব্যাপার, পাঁক কাদার ভেতরে থাকলেও এই মাছের গায়ে কিন্তু কাদা লাগে না। পাঁকাল নাম বোধ হয় একারণেই।
–এই লেখার কিছু অংশ আমার এক শিক্ষকের লেখা থেকে সংগৃহীত। banglasahityachhotogolpa.blogspot.in
অন্ধকার রাতে মাঝে মাঝে এই পচা জলাভূমিতে আলো জ্বলতে দেখা যায় , এটাই আলেয়া। পচা জৈব পদার্থ থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস অত্যন্ত দাহ্য বলে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জ্বলে উঠে। অনেকে একে ভূতের লীলাখেলা মনে করে ভয় পায়। আমার বাবা ও ঠাকুমা মুখে যেমন যেমন শুনেছি, ঠিক তেমন তেমন এখানে লিখছি- “আমাদের গ্রাম গাইঘাটা থানার অন্তর্গত, পোষ্ট অফিস ধর্মপুর। ওই জলা জমি বা বিলে নাকি আলেয়া দেখা যায় মাঝে মাঝে। নিল রঙের আপছা আলো, হঠাৎ ধুপ করে জলা জমির উপরে জলে উঠে নিভে যায়। শীতকালে নাকি এটা বেশী দেখা যায়। আমার বাবা ও ঠাকুমা দুজনেই দেখেছে। এছাড়া গ্রামের অনেকেই দেখেছে।”
“রাতের অন্ধকারে জলাভূমিতে বা খোলা প্রান্তরে আলেয়া দেখা যায়। মাটি হতে একটু উঁচুতে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। আলেয়া সৃষ্টি নিয়ে নানা মত রয়েছে। লোককথায় একে ভৌতিক আখ্যা দেওয়া হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করে গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে আলেয়া এর উৎপত্তি। যেহেতু মিথেন গ্যাসের আপনি জ্বলার ক্ষমতা নেই তাই আগুন শুরুর কারণ হিসেবে তারা দাহ্য ফসফিন (PH3) ও ডাইফসফিন(P2H4) গ্যাসকে চিহ্নিত করেছে। কেউ মনে করেন বাঁশ বা শুকনো কাঠের ঠোক্করে যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় তা- থেকেই এই মার্শ গ্যাসে আগুন লাগায়।”
– উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।
আলেয়া [Will-O-the-wisp]:- বদ্ধ জলাভূমিতে উদ্ভিদ পদার্থের জৈব যৌগের ব্যাকটেরিয়াঘটিত বিয়োজনের ফলে মিথেন উত্পন্ন হয়, আবার অনেক সময় প্রাণীদেহের বিয়োজনের ফলে ফসফিন [PH3], ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] জলাভূমিতে উত্পন্ন হয় । তাই জলাভূমিত যে মিথেন উত্পন্ন হয় তার সঙ্গে অনেক সময় ফসফিন ও ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] মিশে থাকে । [P2H4] বায়ুতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্বলে ওঠে । ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] -এর বায়ুতে দহনের ফলে যে তাপ উত্পন্ন হয় তা মিথেনকে নীলাভ শিখায় জ্বলতে সাহায্য করে । ফলে বিচরণশীল আলোক শিখাই হল আলেয়া [Will-O-the wisp] । তাই বদ্ধ জলাভূমিতে বা শ্মশানে অনেক সময় আলেয়া দেখা যায় । আলেয়া কোনো ভৌতিক ঘটনা নয়, এটি একটি স্বভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা ।
– bissoy.com থেকে সংগৃহীত।
Thanks for sharing !!