এক দিনে দুই চমক। প্রথম ঘটনা, বেঙ্গালুরুর একটি বাঙালি খাবারের হোটেল, নাম প্রকাশে আমি অনিচ্ছুক। গতকাল বিকেলে দিনদয়াল পরোটা (formerly known as Moghlai Porota) খেতে ইচ্ছে হয়েছিল। আমি আমার নিকটতম বাংলা হোটেলে পৌঁছে গেলাম। হোটেলের সামনে পরোটা ভাজা হচ্ছিল, আমি ঢোকার সময় বাঙালি বাবুর্চিকে

“একটা মোগলাই পরোটা”

বলে ভিতরে গিয়ে বসলাম। বসার পরে বাইরে থেকে কানে আওয়াজ এলো,

“Egg না Chicken?”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উত্তর দিলাম,

“ডিমের”

ব্যাস, তার পর নীরবতা। প্রায় ২০ মিনিট পরে হোটেলের এক কর্মচারী একটা খাবারের পার্সেল আমার টেবিলে এনে দিল। দেখেই মাথাটা গরম হয়ে গেল। আমি অতি নম্র ভাবে বললাম,

“এটা একটা প্লেটে দেওয়া যাবে, আমি এখানে খাবো।”

টমেটোর মতো মুখওয়ালা হোটেলের মালিক ক্যাশে বসে ছিল, তিনি বললেন,

“এখানে খাবে সেটা আগে বলবে তো?”

এ কথা শুনে আমার মেজাজ আরও বিগড়ে গেল। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করে যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে বললাম,

“পার্সেল নিয়ে যাবো সেটাও তো বলিনি।”

এই সব কথার মাঝে বাবুর্চি স্বয়ং এসে বলল,

“দুটো মোগলাই কি এখানেই খাবেন?”

মেজাজ আরও বিগড়ে গেল। এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললাম,

“একটা ডিম মোগলাই বললাম তো!!”

এবার হোটেলের মালিক আর বাবুর্চি একে অপরের দিকে খটমট করে দেখল। বাবুর্চি কথা না বাড়িয়ে পার্সেল থেকে একটা পরোটা বের করে প্লেটে রেখে আমাকে টেবিলে দিয়ে গেল। আমি ভাবলাম সব নাটক শেষ। কিন্তু বন্ধু, পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত। মিনিট ১৫/২০ বসে বসে পরোটা খেলাম। মন্থর গতিতে হাত-মুখ ধুয়ে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে এলাম দাম দিতে। আমি জানি দিনদয়াল পরোটা (formerly known as Moghlai Porota) লকডাউনের আগে ৪০ টাকা ছিল, আর পরে ৫০ টাকা হয়েছে। তবুও কেমন যেন মনে হলো জিজ্ঞাসা করি,

“আমার কত হলো?”

চিটিংবাজ বাঙালি হোটেল মালিক অন্যদিকে তাকিয়ে হাতে কি একটা কাজ করতে করতে ব্যস্ততার ভান করে বলল,

“৬০ টাকা।”

আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে দ্বিতীয় পরোটার কাঁচামালের দামটা ধরে নিল। আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম,

“আগে ৪০ ছিল, লকডাউনের পরে ৫০ ছিল, আর আজ ৬০!!”

কুচুটে বাঙালি অন্য দিকে তাকিয়ে এমন ভাব করছে যে সে আমার কথা শুনতেই পায়নি। আমি UPI-তে পেমেন্ট করে চলে এলাম।

বাঙালিই বাঙালির বড় শত্রু
বাঙালিই বাঙালির বড় শত্রু

দ্বিতীয় ঘটনা। দিনে ২/১ বার রাস্তার ওপারের দোকানে কফি খাই। দোকানদার স্থানীয়, লোকটি জানে আমি কেমন কফি পছন্দ করি— একটু কড়া, অল্প মিষ্টি কফি। বহুদিন একই দোকানে গেলে কিছু আর বলতে হয় না। উনি নিজে থেকে কফি বানিয়ে নিয়ে আসেন। লকডাউনের আগে যা দাম ছিল, পরেও তাই আছে— সেই ৮ টাকা। আমি রোজ কফি পান করে UPI-তে পেমেন্ট করে চলে আসি। আগে ফোন দেখিয়ে আসতাম, কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো Paytm একটি সাউন্ড সিস্টেম বসিয়ে দিয়েছে। পেমেন্ট করলেই এক যান্ত্রিক মহিলা কণ্ঠ জানিয়ে দেয় যে কত টাকা পেমেন্ট হয়েছে। এখন আর ফোন দেখাতে হয় না।

কাল সকালে কফি খেয়ে UPI না করে একটি কুড়ি টাকার নোট দিয়েছিলাম। কফিওয়ালা স্বাভাবিকভাবে ১০ টাকা ফেরত দিল। আমি ভাবলাম হয়তো ২ টাকা নেই, তাই দিল না। কিছু না বলে চলে এলাম। সন্ধ্যায় আবার কফি খেতে গেলাম। কফি শেষ করে হঠাৎ মনে এলো সকালের ২ টাকার কথা। ইচ্ছে করেই জিজ্ঞাসা করলাম,

“ভাইয়া, কিতনা হুয়া?”

উত্তরে বললেন, “১০ টাকা।” না থেমেই উনি বললেন, ১ মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে উনি কফির দাম বাড়িয়েছেন। কারণ আগে কাচের গ্লাসে দিতেন, এখন কাগজের কাপে দেন তাই। আমি শুনে অবাক!! গত ১ মাস ধরে চুপচাপ ওনাকে না জিজ্ঞাসা করে আমি ৮ টাকা পেমেন্ট করে চলে আসি। উনিও কখনও কিছু বলেননি, আমিও জিজ্ঞাসা করিনি। এই কথাটা বলতেই দোকানদার হেসে বললেন, “ওহ, ঠিক হ্যায়।”

এতে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল, বাঙালিই বাঙালির বড় শত্রু।


★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়। পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *