Share this post:

একটি অর্ধেক দিন ব্যাঙ্গালোর প্যালেসে

২রা অক্টোবর ২০২২ এ রোববার পড়াতে একটা ছুটি মাটি। অন্য রোববারের তুলনায় এদিন শহর একটু ফাঁকাফাঁকা। কদিন থেকেই মনটা ছটফট করছে কোথাও যাওয়ার জন্য। ফোনে গু-গুলে মনস্থির করলাম ব্যাঙ্গালোর প্যালেস বা প্রাসাদ দেখতে যাবো। একা বোকা লাগবে তাই সঙ্গে নিলাম আপিসের এক সহকর্মী কে। এ যাত্রায় আমাদের বাহন এক এবং অদ্বিতীয় আমার টাট্টুঘোড়া। আজ আমার টাট্টুঘোড়া ২০০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করলো। ছোট্ট করে একটু হাততালি হয়ে যাক!

২০০০০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলেছে আমার টাট্টু ঘোড়া!

২০০০০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলেছে আমার টাট্টু ঘোড়া!

গু-গুলে দেখেলাম আমার ঘর থেকে আমাদের আজাকের গন্তব্য মাত্র সাড়ে ১৪ কিলোমিটার। সহকর্মীর এদিকে বায়না জুড়ে দিলো Orion mall যাবে বলে।

প্রথমে আমার গেলাম Orion mall, এখানে হাউ-মাউ-খাউ করে পেটের ও চোখের খিদে মেটালাম। কি খেলাম সেটা যতক্ষণ পাঠককে না বলি ততক্ষণ আমার পেটটা কেমন ফুলে থাকে। ছবি নিচে দিয়ে দিলাম। হেউ হেউ করে দুজনে ঢেকুর তুলে বেরিয়ে পরলাম দ্বিতীয় গন্তব্যের দিকে।

ম্যাকডোনাল্ডস এ পেটপুজো

ম্যাকডোনাল্ডস এ পেটপুজো

প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু ২৪০/- টাকা মাত্র, সঙ্গে পার্কিং ফ্রি। ক্যামেরা ট্যাঁমেরা নিয়ে আগে হয়তো ঢুকতে দিতো মেলা টাকা নিয়ে, কিন্তু আমারা দেখলাম না তেমন কিছু। চারপাশে শুধু লেখা আছে প্রাসাদের ভিতরে ছবি ও ছায়াচিত্র তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। দণ্ড অর্থাৎ টাকার দণ্ড, জরিমানা। এই সব দেখে আমি তো ভয়ে পকেট থেকে ফোনই বার করবো না ভেবেছিলাম। যাইহোক টিকিট নিয়ে পায়েপায়ে এগলাম। ঢুকেই দেখি লম্বা লাইন, কিসের তা জানি না। খোঁজ নিয়ে জানলাম এনারা প্রবেশ মূল্যর বিনিময়ে একটি করে audio guide এর জন্য একটা ফোন ও headphone দিচ্ছে। এতে বিভিন্ন ভাষায় প্রাসাদের বিবরণী আছে। আমি নিলাম হিন্দি, বন্ধু নিলো তেলে-গু।

এবার ধাপেধাপে উপরে ওঠা, নিচে নামা, সাইন বোর্ড দেখে audio guide এর সঠিক বোতাম টিপে তথ্য শোনা। বাইরে থেকে প্রাসাদটি এত বড়ো দেখালেও, দর্শনার্থীদের জন্য খুবই সামান্য কিছু খুলে রেখেছে। সর্বাধিক ৪৫ মিনিট ও সর্বনিম্ন ১০ মিনিটের মধ্যে এই প্রাসাদটি ঘুরে দেখা যায়।  বর্তমানে ব্যাঙ্গালোর প্যালেস বা প্রাসাদটি মহীশূর রাজপরিবারের সম্পত্তি। ওয়াদিয়ার রাজবংশ প্রাসাদটি আনুমানিক ১৮৮৭ সালে নির্মাণ করিয়েছিলেন। কথিত আছে যে ওয়াদিয়ার রাজবংশের রাজা চামরাজা ওয়াদেয়ার তার এক ইংল্যান্ড সফরে লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসেল দেখে বেশ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই তিনি দেশে ফিরে একই আদলে ব্যাঙ্গালোর প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

প্রাসাদটি বর্তমানে যে এলাকায় অবস্থিত সেটি মূলত রেভারেন্ড জে গ্যারেটের (Reverend J Garrett) সম্পত্তি ছিল। ইনি ক্যান্টনমেন্ট শহরের একজন স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। রেভারেন্ড জে গ্যারেট (Reverend J Garrett) এখানে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন আনুমানিক ১৮৬২ সালের দিকে। আনুমানিক ১৮৭৩ সালে ওয়াদিয়ারের তৎকালীন রাজা প্রাসাদটি কিনেছিলেন রেভারেন্ড জে গ্যারেট (Reverend J Garrett) থেকে এবং ১৮৭৪ সালে পুনঃনির্মাণ শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক নির্মাণ ১৮৭৮ সালে সম্পন্ন হয়েছিল এবং পরবর্তী সংযোজন এবং সংস্কার তার পরে করা হয়েছিল। প্রাসাদটি অভ্যন্তরে দুর্দান্ত কাঠের খোদাই করা নক্সার এবং টিউডর-স্টাইলের স্থাপত্যর জন্য জনপ্রিয় । (Tudor style architecture).

৪৫০০০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে, ৩৫ টি কক্ষ, বিশ্রামাগার সহ বেডরুম ছিল। সে আমলে ১,৯৮,১৫৮ টাকা ব্যয়ে সংস্কার সম্পন্ন হয়েছিল। প্রাসাদটির প্রায় সব আসবাবপত্র ক্যালকাটার লাজারাস অ্যান্ড কোম্পানি (Calcutta’s C. Lazarus and Company) দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল।

প্রাসাদের প্রতিটি কারুকার্য ও শিল্পকার্য এটাই সাক্ষ্য দেয় যে ওয়াদিয়ারা সত্যিই শিল্প ও স্থাপত্যের অনুরাগী ছিলেন। গৃহসজ্জার সামগ্রী, পিতল লাগানো গোলাপ কাঠের (Rose wood) দরজা, ঘষা কাঁচের জানালা, বেলজিয়ামের ক্রিস্টাল থেকে তৈরি ঝাড়বাতি, চিত্রকর্ম ও শিকারের নিদর্শন সবকিছুই একজন রাজা পরিবারের জন্য উপযুক্ত ছিল। বর্তমানে এই প্রাসাদটি শহরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রদর্শনী, কনসার্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।

আমরা মাত্র ৪৫/৬০ মিনিটে প্রাসাদের ভিতরের ও বাইরের যাকিছু দেখের সব দেখে ফেললাম। ভিতরে বাইরে মিলিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম। ভিতরের ছবি তুলতে হয়েছে অতি সাবধানে। অবশ্য প্রায় সকলেই ছবি তুলছিলো অই জন্য সাহস করে আমিও তুলেছিলাম। এমনিতে আমি খুবিই ভীতু প্রকৃতির মানুষ। এ যাত্রায় আমাদের যাত্রা শেষ, দেখা হবে আগামী কোন এক নতুন স্থানে।

Bangalore Palace | ব্যাঙ্গালোর প্যালেস বা প্রাসাদ

[foogallery id=”15672″]

Share this post:
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *