সেই যেন কতকাল আগের কথা, ২০০৬ সালে ঘর ছেড়েছিলাম—হাতে স্যুটকেস, কাঁধে স্বপ্ন, আর মাথাভর্তি চুল! তারপর থেকে বাড়ি ফেরা আমার ঠিক যেন কোনও উৎসবের অতিথি হয়ে যাওয়া—কখনও হঠাৎ করে, কখনও পরিকল্পনা ছাড়াই। ঠিক তখন থেকেই শুরু চুলের মুকুট খসে পড়ার গল্প।

২০১৯-এ এসে দেখি, মাথায় চুল বলতে যাদের বলি, তারা গুটিকয়েক বীরযোদ্ধা—যারা কালের প্রলয়েও টিকে রয়েছে। কী যত্ন করি না তাদের! যেন রাজার রাজমুকুট রক্ষা করছি নিজের হাতে।

ছোটবেলায় দেখতাম, বয়স হলেই কারও কারও মাথা হয়ে যায় কঙ্কালসার জমি—দুই পাশে কানের উপর আর পিছনে একটু সবুজ ঘাসের মতো চুল টিকে থাকে, বাকি পুরোটাই মরুভূমি। তখন ভাবতাম, ‘আমার যদি এমন হয়, আমি আর বাঁচব না!’ এখন ভাবি, ‘বাঁচব না মানে? টাকেরও তো কদর আছে—অনেক বিখ্যাত মানুষই তো চুল ছাড়া বেশ আভিজাত্য দেখায়।’ এইসব ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিই, যেন এক কিশোর ভালোবাসায় ছেঁকা খেয়ে বলছে, “ভালোই হয়েছে, ও এমনিতেই আমার টাইপ ছিল না।”

তবু ভয়টা থেকেই যায়। মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি—ঘন চুলগুলো পড়ে যাচ্ছে হাতের মুঠোয়। ঘুমের ঘোরে আঁতকে উঠে বসি, তৎক্ষণাৎ হাত চলে যায় মাথায়—যে ক’টা চুল এখনো আছে, তারা আছে তো! যেন যক্ষের ধন ছুঁয়ে দেখা।

তবে সত্যি কথা কী জানো? ভয়টা চুল হারানো নিয়ে নয়, ভয়টা ওই কানের পাশের দু’পাশে যেটুকু থেকে যায়, সেই ‘অশ্বখুরাকৃতি’ অদ্ভুত স্টাইলটা নিয়ে। যদি চুল না-ই থাকে, তবে সাহসের সঙ্গে একেবারে ফাঁকা হোক! কিন্তু ওই U-আকৃতির চুল নিয়ে বাঁচা মানে প্রতিদিন পকেটে চিরুনি নিয়ে বেরোনো—আর সময় পেলেই কানের পাশের লম্বা চুলগুলো যত্ন করে মাথার উপর দিয়ে বামদিকে ফেলে দেওয়া—যেন একটা অলীক কল্পনায় টাকটা ঢেকে ফেলছি!

পুরোটাই এক মানসিক স্বস্তি—একদম উটপাখির মতো, যে বালির মধ্যে মাথা গুঁজে ভাবে, ‘আমি তো কাউকে দেখছি না, মানে আমাকেও কেউ দেখছে না।’ কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে—টাক ঢাকার চেষ্টা যতই করি, টাক তো আর আত্মসমর্পণ করে না!

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *