আমার সাথে এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। যেমন ধরুন কোনো এক অতীতে, কোনো এক সময়ে, কোনো এক মুহূর্তে হয়তো একবার ভেবেছি যে – এমন হলে কেমন হতো বা ওমুক যায়গায় যেতে পারলে কেমন হতো? এবং সেটাই ঘটেছে আমার জীবনে পরবর্তী সময়ে। হঠাৎ হঠাৎ বর্তমান আর অতীতের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাই আমি। কয়েক বছর আগে যা ভেবেছিলাম ঠিক সেই একই ঘটনাই হয়তো ঘটেছে আমার সাথে বা আমি সেই একই স্থানে দাড়িয়ে আছি, যার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম সুদূর অতীতে কোন এক সময়ে। সেই মুহূর্তে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে তখন।
সিনেমার পর্দায় প্রথম দেখা ইলোরার কৈলাস মন্দির সম্ভবত ২০০৭ বা ২০০৮ ফেলুদা সিরিজের ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ সিনামায়। এর কয়েক বছর পরে ২০১৫ তে আমি সশরীরে কৈলাসে ঘটনা চক্রে। হায়দেরাবাদ থেকে আমি স্নাতকোত্তর করার পর ঔরঙ্গাবাদে একটি সরকারি সংস্থায় বেসরকারি কর্মচারী হিসাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই একই সংস্থায় তিন বছরের কর্ম জীবনে মহারাষ্ট্রের প্রায় সব কতি বড় শহর আমি ঘুরে বেড়িয়েছি। ভ্রমন বা ছুটি কাটাতে নয়, সম্পূর্ণ আপিসের কাজে। ঔরঙ্গাবাদ, পুনে, মুম্বাই, সাংলি, নাসিক, আম্রাবতি, মালেগাও, কোলাপুর, নান্দেড়, জালগাও, জানলা এবং লাতুরে আমার পায়ের ধুলো পড়েছে। এক বা দুই দিন নয়, যেখানেই গিয়েছি হয় সাত দিন না হয় পনেরো দিন টানা থেকেছি। তবে অজন্তা, ইলরা আর ঔরঙ্গাবাদের আশেপাসের স্থান আমি ভ্রমনের উদ্দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি।
হঠাৎ একদিন আপিসের সহকর্মীদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ছুটির দিনে, গন্তব্য ঔরঙ্গাবাদের ইলরা গুহা দেখা। ঔরঙ্গাবাদের কৈলাশ মন্দির নিজের সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, বহু বছর ধরে রহস্য লুকিয়ে রেখেছে তার সৌন্দর্যের আড়ালে। অনেককেই বলতে শুনেছি ইলরার কৈলাশ মন্দির নাকি এক অতি উন্নত সভ্যতার মানুষ বানিয়েছিলো যা বর্তমান সভ্যতার মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ছিলো। History চ্যানেলের Ancient Alien নামক একটি তথ্যচিত্রে এটা দাবি করা হয় যে এই কৈলাস মন্দির নাকি সেই সময়ে মানুষ পক্ষে তৈরি করা সম্ভব না, হয়তো Alien বা অন্য গ্রহের জীব এটি সেই সময়ের মানুষ কে মন্দির বানাতে সাহায্য করেছিল। কৈলাশ মন্দির ইলোরা গুহার মধ্যে অবস্থিত। এটা মনে করা হয় যে ইলোরা গুহাই পৃথিবীর প্রাচীন গুহা, এখানে পাথর কেটে গুহা ও মন্দির তৈরী করা হয়। আনুমানিক এই মন্দির প্রতিষ্টিত করা হয় অষ্টম শতাব্দীতে রাষ্ট্রকূটের রাজা কৃষ্ণ ১ এর শাসনামলে। সত্যজিৎ রায় তার ফেলুদা গল্পে অনেক তথ্য দিয়েছেন পাঠকদের এই ইলোরা সম্পর্কে। যারা ফেলুদা সিরিজের কৈলাস নিয়ে গল্পটা পড়েছেন তারা অবশ্যই ফেলুদার মুখ থেকে এটা নিশ্চয়ই শুনেছেন –
“চুনি পান্না পৃথিবীতে হাজার হাজার আছে, ভবিষ্যতে সংখ্যায় আরো বাড়বে। কিন্তু কৈলাসের মন্দির বা সাঁচির স্তুপ বা এলিফ্যান্টার গুহা – এ সব একটা বই দুটো নেই। হাজার দু’ হাজার বছর আগে আমাদের আর্ট যে হাইটে উঠেছিল সে হাইটে ওঠার কথা আজকের আর্টিস্ট ভাবতেই পারে না।”
ফেলুদার
তপসে কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন ফেলুদা রূপী সত্যাজিৎ –
“আর্ট ছেড়ে দিয়ে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দিকটা দেখ”
ফেলুদার
মন্দিরের কারুকার্য ও কাজ দেখে বোঝা যায় এই মন্দির তৈরী করতে প্রচুর পাথর কেটে বা ভেঙ্গে সরাতে হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন যে প্রায় ৪ থেকে ১০ লক্ষ টন পাথর কেটে সরাতে হয়েছিল। এবার অদ্ভুত ব্যাপার হলো পাহাড় কেটে যে পাথর বের করা হয়েছিল তা মন্দিরের চারপাশে বা কয়েকশো মাইলের মধ্যেও নেই। তাহলে সেই পাথর কোথায় গেলো? এটাও একটা চমক!
সঞ্জয় হুমানিয়ায়া
ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র – ১২ই নভেম্বর ২০১৫
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★