কেন সরকারি বা আধা-সরকারি অফিসের কর্মচারীরা ভদ্রভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে না? ব্যাংক থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ অফিস, ফুড সাপ্লাই অফিস থেকে শুরু করে গ্যাস অফিস, অথবা কোর্ট থেকে শুরু করে BLR অফিস — আপনি যেখানেই যান, চোখ রাঙানি আর দাঁত-খিঁচিয়ে ছাড়া কোনও প্রশ্নের উত্তর পান না। নিজের টাকা আপনি ব্যাংকে রাখতে যাবেন? শত বার আগে ভেবে নিন। পদে-পদে আপনাকে হেনস্থা হবে। নিজের টাকা জমা দেওয়ার সময় ১–২ বার যদি আপনি ভুল করে ব্যাংক কর্মচারীর কাছে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে ফেলেন, আপনি যেন মহা পাপ করে ফেলেছেন। মেজাজ, চোখ রাঙানি আর উপরি পাওনা হিসেবে দাঁত-খিঁচুনি সহ একটা অপ্রাসঙ্গিক উত্তর পাবেন।

আপনার মনে হবে যে আপনি সত্যিই ভয়ানক কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন এবং তার কোনো ক্ষমা নেই। বেশিরভাগ সময় আমরা ভেজা বেড়ালের মতো মেউ-মেউ করে লেজ গুটিয়ে ফিরে আসি। “লিংক নেই”, “সই মিলছে না”, “ব্রেক-এর পরে আসুন”, “বড় সাহেব নেই”, “বললাম তো হবে না”, “একবার বললে শুনতে পান না, কাল আসুন” — এসব হচ্ছে কমন কথা ব্যাংক কর্মচারীদের।

এতো শুধু ব্যাংকের কথা বললাম। বিদ্যুৎ অফিসে আবার অন্য নিয়ম। দরখাস্ত লিখুন, সাদা কাগজে লিখে আনুন, বাংলা ও ইংরেজি দুটোতেই লিখে আনুন, বড় বাবু নেই, পরের সপ্তাহে আসুন, বাড়ির খাজনার রশিদ আনুন, বিলের রশিদ আনুন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সব শেষে বলা হবে, “এটা আপনার নামে কানেকশন হবে না, ঠাকুরদাকে নিয়ে আসুন।” ঠাকুরদা যদি বেঁচে থাকেন তবে হয়তো কাজ হবে, তা না হলে আপনিও শেষ। সব শেষে বলা হবে, “আপনার এই ফর্মে হবে না, ২১ নম্বর ফর্ম ভরে আনুন।” সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়ার পরে বলা হবে যে রামায়ণ তো সিলেবাসে ছিল না — আপনাকে মহাভারত পড়তে হবে।

আপনি যেকোনো সরকারি সার্ভেন্টের অফিসে গেলে নিজের ওপর খুব রাগই অনুভব করবেন। মনে হবে এত তাচ্ছিল্যের পরে কেন বেঁচে আছেন? আমি আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মচারীর কাছ থেকে সুন্দর ব্যবহার পাইনি — আর আশা করিও না। এই সব বড় বড় সাহেবদের মেজাজ সব সময় সপ্তম আকাশে থাকে। যে চা এই অফিসে দেওয়া হয়, সেই চাওয়ালা পর্যন্ত বুক ফুলিয়ে জামার কলার উঁচিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়।

আমার কি মনে হয় জানেন? এই সব মানুষরা তাদের কর্ম-অক্ষমতা লুকানোর জন্যই এমন ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে। তা না হলে কি সামান্য ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বসা ভদ্র লোক টাকা ছুঁড়ে দিয়ে পানের পিক ফেলে দাঁত-খিঁচিয়ে বলে “খুচরা নেই, টিকিট হবে না”? আমি বলছি না সবাই এমন, তবু বুকে হাত রেখে বলুন — কোনো দিন কি আপনি এদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার পাননি?

আমরা একটা বয়স্ক, গরীব রিকশাওয়ালাকে ‘তুই তুই’ করে ডাকলে ওরা আমাদের সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বলে। আর এই সব সাহেবদের সঙ্গে যখন আমরা ‘আপনি আপনি’ করে কথা বলি, জবাবে পাই কটাক্ষ আর চোখ রাঙানি। আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই কোনো সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করার — শুধু এটুকু বলতে চাই, মিষ্টিভাবে কথাও বলা যায়, কাজ না হলে না করলেই বা কি হয়েছে?

সঞ্জয় হুমানিয়া
বেঙ্গালুরু – ই মে ২০১৮

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

রাজ কর্মচারী
রাজ কর্মচারী
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *