আরব্য রজনীর গল্পে বারবার সুরক্ষা কবজের উল্লেখ পাওয়া যায়। রণে, বনে, জলে কিংবা জঙ্গলে—যেখানেই বিপদ আসুক না কেন, সেই কবজ নাকি আশ্চর্য ক্ষমতায় রক্ষা করত তার ধারককে। ভূত-প্রেত, দুষ্টলোক বা অশুভ শক্তি—সবই দূরে থাকত এই মহাশক্তিশালী কবজের ভয়ে।

সময়ের স্রোত বহুদূর এগিয়েছে। আজও একটি সুরক্ষা কবজ আমাদের জীবনে সমান কার্যকর। তবে তার চেহারা বদলে গেছে, তাকে ঘিরে আমাদের অভ্যাসও পাল্টেছে। কেউ গলায় ঝোলায়, কেউ কোমরে, আবার কেউ সযত্নে কলার বেল্টের পাশে ঠিক জায়গামতো রাখে। সকালবেলা ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে অফিস রওনা দিলেই এই কবজ শরীরে ধারণ করি, আর ফিরে না আসা পর্যন্ত সেটিই আমাদের অনিবার্য সঙ্গী।

এই রহস্যময় আধুনিক কবজের নাম—ID কার্ড

কবজের অফিস সংস্করণ

আজকের দিনে প্রতিটি IT কোম্পানির প্রতিটি কর্মীর কাছে এই কবজ আবশ্যিক। অফিসের কাঁচের দরজা খুলতে, নির্দিষ্ট ফ্লোরে ওঠতে, কিংবা শুধু “অফিসে থাকা” প্রমাণ করতে—সব জায়গায় এর প্রয়োজন হয়। এতটাই যে, অনেক সময় আমাদের মনে হয়, আরব্য রজনীর জাদুকরী কবজকে টেক্কা দিতে পারবে এই প্লাস্টিকের টুকরো।

যত বড় কোম্পানি, তত বেশি তার কবজ ঝলমলিয়ে ওঠে! Widro বা Linfosys-এর মতো নামীদামী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই কবজ গলায় ঝুলিয়ে রাখেন ঘুমেরও মধ্যে। যেন অবচেতনেও সবাই বুঝতে পারে—তাঁরা একটি MNC-র গর্বিত সৈনিক।

অন্যদিকে, যারা মাঝারি মানের IT কোম্পানিতে কাজ করেন, তাঁদের কবজ কিছুটা লাজুক। পকেটে লুকিয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। অফিসে ঢোকার কয়েক মুহূর্ত আগে গলায় ঝোলে, আবার কাজ শেষে বেরোলেই যেন বিলীন হয়ে যায়। বাস-ট্রামে বা রাস্তাঘাটে এই কবজ শোভা পায় না, কারণ কোম্পানির নাম শুনেই চারপাশে কেউ “প্রেস্টিজের” ওজন বাড়াবে না—এই আশঙ্কায় কর্মীরা হীনমন্যতায় ভোগেন।

আইডি কার্ড: প্রতীক না প্রয়োজনে?

তাহলে প্রশ্ন জাগে, এই আধুনিক কবজ আমাদের কাছে কেবল দরজা খোলার যন্ত্র? নাকি হয়ে উঠেছে পরিচয়ের প্রতীক?

  • বড় কোম্পানির কবজ আমাদের অহংকারের কারণ।
  • মাঝারি কোম্পানির কবজ আমাদের লজ্জার বোঝা।
  • অথচ দিনের শেষে—প্রত্যেকটি কবজই কেবল একটি দরজা খোলার চাবি।

হয়তো সত্যিই, আরব্য রজনীর মতোই এই কবজও এক মায়াজাল—যা আমাদের বাস্তবের সীমানা ভেদ করে অহংকার-হীনমন্যতা, আভিজাত্য-হতাশার গল্প বলে যায় প্রতিদিন।

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *