পার্ল ভ্যালি বাঁধ
উস্রি নদীর ঝর্না দেখতে যাব। দিনটা বড়ো বিশ্রী। শুনছ বজ্রের শব্দ? শ্রাবণ মাসের বাদ্লা। উস্রিতে বান নেমেছে। জলের স্রোত বড়ো দুরন্ত। অবিশ্রান্ত ছুটে চলেছে। অনন্ত, এসো একসঙ্গে যাত্রা করা যাক। আমাদের দু-দিন মাত্র ছুটি।
আমাদেরে এক-দিন মাত্র ছুটি। গত রোববার (১৯/০৯/২১) আমাদের প্লান ছিল পার্ল ভ্যালি বাঁধের ঝর্না দেখতে যাব। যেমন প্লান তেমন প্রস্তুতি, তেমন যাত্রা শুরু। হাত পুড়িয়ে সকাল সকাল রান্না বান্না করে খেয়ে দেয়ে, পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে, দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গন্তব্য পার্ল ভ্যালি বাঁধ, বাঙ্গালুরু থেকে ৩০/৩৫ কিলোমিটার দূরে। আমরা প্রথমে Hosur Road ধরে সোজা পৌঁছলাম Chandapura Circle, তারপর ডান হাতে Anekal Rd ধরে পৌঁছলাম Anekal Town. এরপর Anekal-Sunavara Rd/Sunavara Muthayala Maduvu Rd ধরে সোজা Hotel Mayura Nisarga Pearl Valley. পথে একটি ছোট চেকপোস্ট পড়বে, এখানে আপনাকে দুই চাকা বাহনের জন্য ২০ টাকা এবং চার চাকা বাহনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হবে। Hotel Mayura Nisarga Pearl Valley পৌঁছে আপনাকে আলাদা ভাবে আর একবার গাড়ি রাখার জন্য টাকা দিতে হবে, খরচা বলতে এই।
Hotel Mayura Nisarga Pearl Valley তে একটু বিশ্রাম নিয়ে এবার ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পালা। পায়েপায়ে ধাপেধাপে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে। প্রকৃতি দ্বারা বেষ্টিত এই শান্ত সবুজ এবং শান্তিপূর্ণ স্থানটি বেঙ্গালুরুর শোরগোল থেকে অনেক দূরে। নাম অনুসারে পার্ল ভ্যালি সুন্দর একটি পাহাড়ের মাঝে, উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত। আপনারা যারা বেঙ্গালুরুতে ব্যস্ত সময়সূচী থেকে একদিনের বিরতি খুঁজছেন তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পিকনিকের যায়গা। পার্ল ভ্যালির প্রধান আকর্ষণ হল মন মোহনীয় জলপ্রপাত, যেমনটা আমি কয়েকটি ব্লগে পড়েছিলাম। পার্ল ভ্যালির প্রধান জলপ্রপাত হল একটি প্রবাহিত জল প্রবাহ যা ৯০/৯২ মিটার উচ্চতা থেকে প্রবাহিত হয় ঝরে পড়ছে নিচে। জলপ্রপাতটির উৎপত্তি ওনাকানহল্লিতে। কথিত আছে কোন এক প্রাচীন কালে এই ঝর্ণার জল উপর থেকে যখন নিচে আঁচড়ে পড়তো তখন সূর্যের আলো এবং জলের ফোঁটা একটি বিভ্রম তৈরি করতো, যা মুক্তার মতো দেখা মনে হতো। শিলা পৃষ্ঠ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া জলের ফোঁটাগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তোর চেহারা দিতো এবং সেই থেকেই এর নাম পার্ল ভ্যালি।
এই জলপ্রপাতের পাশে একটা মহাদেবের মন্দির রয়েছে। পার্ল ভ্যালি পরিদর্শনকারী প্রত্যেকেই এখানে একবার ঢু মেরে যায়। প্রত্যহ সকালে এখানে সুন্দর পুজোর ব্যবস্থা আছে।
পার্ল ভ্যালিতে আপনি কি করতে পারেন?
পার্ল ভ্যালির ঝর্ণা: পার্ল ভ্যালিতে দুটি ভিন্ন জলপ্রপাত রয়েছে। প্রথমটি তিনশো ধাপ নিচে, যা প্রথম জলপ্রপাতের দিকে নিয়ে যায়। নিচে নামার এই ধাপগুলো ভেজা এবং কিছুটা পিচ্ছিল। আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে নামার সময়। নিচে পৌঁছে ছোট একটি পুকুর দেখতে পাবেন। এখানে বলে রাখি, বেশ কিছু বানর আছে এখানে, এই বানর হতে সাবধান।
ট্রেকিং: এই স্পটটি ট্রেকিংয়ের জন্যও আদর্শ এবং ট্রেকারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। পর্বতশ্রেণী ও খোলা বনগুলি ট্রেকারদের জন্য খুবই ভালো।
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,
পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের পরে,
বুকের পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,
পড়ুক ঝরে।।
ভেবেছিলাম, যখন ঝর্ণার সামনে আমি দাড়িয়ে থাকবো তখন আমার মনের ভিতরে এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটি বেজে উঠবে! কিন্তু হায় রে নিয়তি, অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায় : Once unlucky, always unlucky.
ঝর্ণার কাছে পৌঁছে আমাদের চক্ষুঃ চড়কগাছে। কোথায় ঝর্ণা? কোথায় মুক্তার মত hasulation? Pearl Valley Dam ব্লগ পড়ে এখানে পৌঁছে দেখলাম সে সব কিছুই নেই। অন্য সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু ঝর্ণা দেখে মন ভরলো না। কূলকুল করে বয়ে চলেছে হিসুর মত এক জলপ্রপাত। আমার এক সঙ্গী বলেই ফেলল যে, হয়তো ইলেক্ট্রিক পাম্প চালিয়ে উপর থেকে জল ছেড়ে কৃত্রিম ভাবে এই ঝর্ণা তৈরি কি না! কি জানি, হলেও হতে পারে।
পাঠকগণ, আমি নিন্দুক! আমার কথায় বিশ্বাস করবেন না, নিজে চোখে একবার গিয়ে দেখে আসবেন। ঝর্ণা মন ভরাতে না পারলেও, সবুজ পাহাড় অবশ্যই আপনার মন ভরিয়ে দেবে।
সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০২১
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★
Pearl Valley Dam | পার্ল ভ্যালি বাঁধ
Isss eto niche neme tumi hisu propat dekhe firle?