কয়েক মাস আগে কথায় কথায় সঞ্জীব বললো, সেদিন সন্ধ্যায় ‘সে’ একটু বেস্ত থাকবে। কৌতুহল বসেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম সন্ধ্যার পরে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ‘সে’ বেস্ত থাকবে! অতি সাধারণ ভাবে সঞ্জীব বলল সেদিন তার জন্মদিন। আর ৫ জন সাধারণ মানুষের মতো আমি ফোড়ন কেটে বললাম, ” ওহ হো!! Birthday party celebration!! তা কোথায় হচ্ছে party?”

সঞ্জীব একটু গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো, ” তেমন কিছু না, এই কয়েক বছর আমার আর সোনালীর জন্মদিনে সোনালী ভালো কিছু রান্না করে পথশিশু দের খাওয়ায়। সারাদিন সবাই কাজের মধ্যে থাকি তাই এই কাজটা বিকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।”

আমি বিস্তারিত জানতে চাইলাম। ‘সে’ আরো বললো এই কাজে তার বাবা মা সকলেই সোনালীকে সাহায্য করে রান্না করতে, খাবার প্যাকেট করতে। আর সন্ধ্যায় তারা দুজনে বেরিয়ে পড়ে সেই খাবারের প্যাকেট বিলি করতে।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোরা ছবি তুলে রাখিস নিশ্চই। উত্তরে ‘সে’ বললো, না রে! আমারা ছবি তুলি না। এতে তো লোক দেখানোর কিছু নেই। তাই ছবি তুলি না। আর খাবার দিতে গিয়ে ছবি তুলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা আমার কেমন যেন ব্যাপারটা লোক দেখানো মনে হয়। আমি তো লোক দেখাতে এটা করিনা, লোককে একদিন একটু ভালো খাইয়ে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি। যার যেটা ভালো লাগে সে সেটা করে। অনেকে জন্মদিনে প্রচুর টাকা খরচা করে বন্ধুদের নিয়ে হইহুল্লোড় করে। আবার সেই বন্ধুবান্ধবই সেই হৈহুল্লোড়ের মধ্যে খুত ধরে, যে খাবার ভালো হয়নি বা কমদামী পানীয় খেতে ভালো না। তেলা মাথায় তেল দিতে সবাই চায়, আমি না হয় উসখখুষ্ক মাথায় তেল লাগলাম।

কথাগুলি আমার মন ছুঁয়ে গেলো। আমি থাকতে পারলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কিভাবে এই কাজে তাদের সাহায্য করতে পারি। একটু ভেবে ‘সে’ বললো, তুই এক কাজ করতে পারিস। জলের বোতলের দাম দিতে পারিস। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। ওকে বলে রাখলাম আমার জন্মদিনে আমিও এটা করতে চাই। ‘সে’ বললো, সোনালীকে বলে রাখা, ও ঠিক তোর জন্মদিনের কয়েকদিন আগে তোকে মনে করিয়ে দেবে।

আজ সকালে আপিস যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি, তখন দেখলাম সোনালী ফোন করছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে ফোন ধরলাম। সোনালী মনে করিয়ে দিলো আমাকে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার জন্মদিন। তার পর কথা হলো ওই ব্যাপারটা নিয়ে। আমি সব দ্বায়িত্ব ওকে দিলাম।

সোনালী ও সঞ্জীব। সঞ্জীব আমার সহপাঠী আর সোনালীর সঙ্গে সঞ্জীবের বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। দুজনে যে এমন একটা মহৎ কাজ শুরু করেছে জেনেও আমার ভালো লাগলো। জুড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এদের এই কাজে। চেষ্টা করবো আমার পরিচিত আরো কিছু মানুষ কে এদের সাথে জুড়ে দিতে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা।

সোনালী সঞ্জীবের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো। তোরা এগিয়ে চল পথ দেখিয়ে, আমরা তোদের অনুসরণ করবো।

আমার অনুরোধে সঞ্জীবের গত জন্মদিনের কয়েকটা ছবি তুলেছিল, সেগুলো আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *