অফিস শেষে কেল্টু ছুটে আসে বারাসাতের দিকে। প্রতিদিনের সেই ২৭ কিলোমিটারের অবিরাম জ্যাম, ক্লান্তি—সব পেরিয়েও রোজ সে পৌঁছায় প্রিয় শহরে, একটু আগেই, ঠিক সাতটার মধ্যে। তার প্রেয়সী, কেল্টুর জীবনের সমস্ত অপেক্ষা, অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে—“তুমি কেন আরও আগে এল না?”
ছুটির দিনের সন্ধ্যা কেল্টুর কাছে বিরাট দীর্ঘ মনে হয়। অফিসের দিনে যেন ঘড়ির কাঁটা ছুটে চলে, কত দ্রুত ৫টা ৪৫ বাজে! ছুটি এলে সময় কাঁটতে চায় না, অথচ দেখা হয় ঠিক আগের মতই, সাতটায়।
আজও সেই অভিমানী প্রেয়সী কিছুক্ষণ থেকে কেল্টুর কাছে বিদায় নিল। শহরের রাস্তায় একা, গন্তব্যহীন হয়ে কেল্টু বাইকের চাকা ঘুরিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। তাড়াহুড়োর নেই, ইচ্ছেরও নেই।


হঠাৎই চিকচিক করা সাদা বালির উপর বড়ো একটা শামুক চোখে পড়ল তার। ধীরে ধীরে, নিজের সংকল্পে পা বাড়াচ্ছে। পাশের ড্রেনের থেকে উঠে এসেছে সে, এবার পিচের রাস্তা পার হয়ে অন্য ড্রেনের দিকে যাবে।
কেল্টু বাইক থামিয়ে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে, পাঁচ মিনিটে মাত্র এক সেন্টিমিটার এগিয়েছে শামুকটি। দৃশ্যটি ঘিরে কেল্টুর মনটা হঠাৎ করে ভারী হয়ে ওঠে। চোখের সামনে যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য—একটা নীল রঙের আল্টো গাড়ি দ্রুতবেগে শামুকটার উপর দিয়ে চলে গেল। কেল্টুর বুকটা ধাক্কা খেল, গায়ে কাঁটা দিল।
আর কিছু না ভেবেই কেল্টু শামুকটিকে হাতে তুলে রাস্তার ওপারে নালার ধারে নামিয়ে দেয়। পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকে—শামুকটি ধীর পায়ে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়।
একটা দীর্ঘ শান্তির নিশ্বাস ফেলে কেল্টু আবার বাইকের চাকা ঘোরায়—এবার কোথাও যাবার উদ্দেশ্য নেই, শুধু নিজের মতো চলা।