কাজের ফাঁকে সকালে আপিসে বসে বসে ফেসবুকে নিচে নামাচ্ছি অর্থাৎ facebook কে scroll down করছি হঠাৎ চোখে পড়লো একটি পোষ্ট। একটি ভোজন রসিক গ্রুপে আমি সদ্য যোগ দিয়েছি, পোষ্টটি সেখানেই দেখলাম। গ্রুপটির নাম Calcutta Foodies Club. পোষ্টে এক মমতাময়ী মা তার বাচ্চা কে প্রত্যেকদিন কি কি টিফিন দেন সেই ছবি সহ অন্যদের সঙ্গে idea share করেছেন।
পোষ্টটি দেখে আমার স্কুলের টিফিনের কথা মনে পড়ে গেলো। আমিও তো ইস্কুলে টিফিন নিয়ে যেতাম, কই আমার টিফিন তো এত চকমকে ছিল না। আমার টিফিন আজকালের মত হালফ্যাশনের ছিল না। একটু ঘরোয়া, একটু সাদামাটা। প্রথম যখন গ্রাম থেকে এসে বারাসাতের ইস্কুলে ভর্তি হয়েছি, তখন সব কিছু নতুন নতুন। নতুন টিফিন বক্স, নতুন জলের বোতল, নতুন ব্যাগ, পকেটে নতুন রূমাল। আমাদের স্কুলে কঠোর নিয়ম ছিল পরিস্কার পরিছন্ন রূমাল নিয়ে যেতে হবে। টিফিনের সময় দিদিমণি দরোজার পাশে দাড়িয়ে থাকতেন, আমরা সবাই লাইন দিয়ে রূমাল দেখিয়ে হাত ধুতে যেতাম। তার পর ক্লাশ ঘরে ফিরে এসে নিজের নিজের টিফিন খেতেম। অনেকেই একে অপরের টিফিন ভাগ করে খেত। কেউ যেদিন ভালো টিফিন নিয়ে আসতো সেদিন সকলেই চাইত তার সাথে টিফিন ভাগ করে খেতে। তবে সর্ত একটা, যার সব থেকে ভালো টিফিন সেই সিদ্ধান্ত নেবে যে কে তার সাথে টিফিন ভাগ করতে পারবে।
আমাকে সে সব ঝক্কি পোহাতে হয়নি। আমার সঙ্গে টিফিন শেয়ার করার প্রস্তাব আসতো না বললেই চলে। আমার কিছু বাধাধরা টিফিন ছিল, যে গুলো অতি সাধারণ। যেমন ধরুন রুটি আর আলুভাজা, বা রুটি আর দিমের অমলেট বা খুব বেশি হলে পরোটা আলুভাজা বা অমলেট। আমার মত টিফিন অনেকেই নিয়ে যেত, সুতরাং আমার সাথে আবার নতুন করে ভাগ করে খাওয়ায় আবার কি মজা! বাড়িতে সময় পেলে রুটি বা পরোটা হতো, কিন্তু সময় না পেলে পাউরুটি আর সন্দেশ। মাঝে মাঝে পাউরুটি ডিম টোস্ট। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই চলতো, সুতরাং আমার টিফিনের উপরে তেমন হামলা হতো না। প্রথম প্রথম যখন আমি নিজে অন্যদের সাথে ভাগ করে খাওয়ার প্রস্তাব দিতাম, কিন্তু প্রত্যেকবার আমার প্রস্তাব কেউ গ্রহন করতো না। এক সময় এমন হয়েছিল পাউরুটি আর সন্দেশ দেখলেই কেমন হতো, খেতে ইচ্ছা করতো না।
টিফিনে হামলার শিকার হতো আমার সেকালের প্রিয় বন্ধু তনয় কর্মকার। যারা বারাসাতের বাসিন্দা, তারা নিশ্চয়ই বিষ্ণুপ্রিয়া মেডিক্যালের নাম শুনেছেন। তনয় এদের বাড়ির ছেলে। তনয়ের মা খুব সুন্দর রান্না করেন। এক এক দিন এক একটি টিফিন, হরেক রকম। ১০-১৫ দিনের আগে ওর টিফিন রিপিট হতো না। আমাদের ক্লাসের এমন কোন ছেলে ছিল না যে ওর টিফিন খায়নি। আমারা যখন একটু বড় হলাম, তখন রীতিমত ওর টিফিন বক্স ছিন্তাই করে আমরা টিফিন খেতাম। ও হাসি মুখে সব কিছু সহ্য করতো। শেষের দিকে তো ও দুটো করে টিফিন বক্স নিয়ে যেত। একটি আমাদের জন্য, অন্যটি আমাদের ও ওর নিজের জন্য। টুকরো টুকরো ঘটনা মনে পড়ে গেলো, তাই লিখে রাখলাম। এছাড়া আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।