গ্রুপটির নাম Calcutta Foodies Club। পোস্টে এক মমতাময়ী মা তাঁর বাচ্চাকে প্রতিদিন কী কী টিফিন দেন, সেই ছবি-সহ অন্যদের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করেছেন।
পোস্টটি দেখে আমার স্কুলের টিফিনের কথা মনে পড়ে গেল। আমিও তো স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতাম। কই, আমার টিফিন তো এত চকমকে ছিল না! আমার টিফিন আজকালের মতো হালফ্যাশনের ছিল না—একটু ঘরোয়া, একটু সাদামাটা। প্রথম যখন গ্রাম থেকে এসে বারাসাতের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন সব কিছুই নতুন নতুন—নতুন টিফিন বক্স, নতুন জলের বোতল, নতুন ব্যাগ, পকেটে নতুন রুমাল। আমাদের স্কুলে কঠোর নিয়ম ছিল—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রুমাল নিয়ে যেতে হবে। টিফিনের সময় দিদিমণি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা সবাই লাইন দিয়ে রুমাল দেখিয়ে হাত ধুতে যেতাম। তারপর ক্লাসঘরে ফিরে এসে নিজের নিজের টিফিন খেতাম। অনেকেই একে অপরের টিফিন ভাগ করে খেত। কেউ যেদিন ভালো টিফিন নিয়ে আসত, সেদিন সকলেই চাইত তার সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেতে। তবে শর্ত ছিল একটা—যার সবচেয়ে ভালো টিফিন, সেই সিদ্ধান্ত নিত কে তার সঙ্গে ভাগ করে খেতে পারবে।
আমাকে সে সব ঝক্কি পোহাতে হয়নি। আমার সঙ্গে টিফিন শেয়ার করার প্রস্তাব আসত না বললেই চলে। আমার কিছু বাঁধাধরা টিফিন ছিল, যেগুলো অতি সাধারণ—যেমন ধরো রুটি আর আলুভাজা, বা রুটি আর ডিমের অমলেট, বা খুব বেশি হলে পরোটা-আলুভাজা বা অমলেট। আমার মতো টিফিন অনেকেই নিয়ে যেত, সুতরাং আমার সঙ্গে আবার নতুন করে ভাগ করে খাওয়ার কী-ই বা মজা! বাড়িতে সময় পেলে রুটি বা পরোটা হতো, কিন্তু সময় না পেলে পাউরুটি আর সন্দেশ। মাঝে মাঝে পাউরুটি ডিম টোস্ট। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটাই চলত, সুতরাং আমার টিফিনের উপরে তেমন ‘হামলা’ হতো না। প্রথম প্রথম আমি নিজে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার প্রস্তাব দিতাম, কিন্তু প্রত্যেকবার আমার প্রস্তাব কেউ গ্রহণ করত না। এক সময় এমন হয়েছিল—পাউরুটি আর সন্দেশ দেখলেই কেমন যেন হতো, খেতে ইচ্ছেই করত না।
টিফিনে ‘হামলার’ শিকার হতো আমার সেকালের প্রিয় বন্ধু তনয় কর্মকার। যারা বারাসাতের বাসিন্দা, আপনারা নিশ্চয়ই বিষ্ণুপ্রিয়া মেডিক্যালের নাম শুনেছেন। তনয় ওদের বাড়ির ছেলে। তনয়ের মা খুব সুন্দর রান্না করতেন। এক-এক দিন এক-এক রকম টিফিন—হরেক রকম। ১০-১৫ দিনের আগে ওর টিফিন রিপিট হতো না। আমাদের ক্লাসের এমন কোনও ছেলে ছিল না যে ওর টিফিন খায়নি। আমরা যখন একটু বড় হলাম, তখন রীতিমতো ওর টিফিন বক্স ‘ছিনতাই’ করে টিফিন খেতাম। ও হাসিমুখে সব কিছু সহ্য করত। শেষের দিকে তো ও দুটো করে টিফিন বক্স নিয়ে যেত—একটি আমাদের জন্য, অন্যটি ওর নিজের জন্য।
টুকরো টুকরো ঘটনা মনে পড়ে গেল, তাই লিখে রাখলাম। এছাড়া আমার আর কোনও উদ্দেশ্য নেই।
সঞ্জয় হুমানিয়া
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ব্যাঙ্গালোর