Share this post:

কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু বা ব্যাঙ্গালোর। বর্তমানে কয়েক লক্ষ বাঙালি বাস করে কর্ণাটকের এই হৃৎপিণ্ডে। কেউ কর্মসূত্রে, কেউ বিবাহ সূত্রে আবার কেউ চিকিৎসা সূত্রে বাংলা ছেড়ে ব্যাঙ্গালোরে এসেছেন। কর্ম ও বিবাহ সূত্রে যারা এসেছে তারা দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলেছে আর যারা চিকিৎসা সূত্রে এসেছে তারা ক্ষণস্থায়ী বন্দোবস্ত করে থাকেন এই তথ্যপ্রযুক্তির শহরে। আপিস, বাজার-ঘাট, শপিং-মল, রেস্তরা, পার্ক, হাসপাতাল, বাসে, ট্রেনে আপনি যেখানেই থাকবেন, সেখানেই অন্তত দুজন বাঙালির সঙ্গ পেতে পারেন। ব্যাঙ্গালোর কিছু এলাকায় বাঙালি গ্রুপের ছড়াছড়ি। দুর্গাপূজা কালীপূজা এখন ব্যাঙ্গালোরে অতি সাধারণ ব্যাপার। কিছু বাঙ্গালির আবার দ্বিতীয় প্রজন্মও ব্যাঙ্গালোরবাসী হয়ে গিয়েছে।

গোটা ব্যাঙ্গালোর আমি চোষে ফেলিনি, অর্থাৎ explore করিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু চোখের সামনে এসেছে, তা থেকেই আজ কিছু স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা আপনাদের সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেবো। প্রথম ব্যাঙ্গালোরে এসে আমি হোঙ্গাসান্দ্রা এলাকার বাসিন্দা হয়ে পড়েছিলাম। সিল্ক বোর্ড থেকে ইলেক্ট্রনিক্স সিটির রাস্তায় বোমনাহল্লি স্টপেজে নেমে ডান হাতে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির পাশ দিয়ে যে রাস্তা চলে গিয়েছে, সেটাই বেগুর মেইন রোড, এই রাস্তাতেই হোঙ্গাসান্দ্রা। এই হোঙ্গাসান্দ্রায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ বাঙালি। সকলেই প্রায় কাপড়জামা তৈরির কারখানায় কাজ করে। ব্যাঙ্গালোরে বেশ কিছু বাঙালি এলাকা আছে যেখানে খুব সস্থায় খুবিই কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব, হোঙ্গাসান্দ্রা তাদের মধ্যে একটি।

আর আপনি যদি পয়সাওয়ালা ভোজন রসিক বাঙালি হয়ে থাকেন, তবে মোটামুটি একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আপনি বাংলা খাবার ও উচ্চমানের জীবনযাপন করার সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন। আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত, শুধু মাত্র দূর থেকে উচ্চমানের বাঙালি জীবনযাপন করতে দেখেছি। ব্যাঙ্গালোরে উচ্চমানের কিছু বাঙালি বাংলা বলতে ও বুঝতে পারে না, এরা অতি চমৎকার জীব। ইংলিশ কথোপকথনের মাঝে মাঝে বাংলা শব্দ গুজে দেন, এবং অদ্ভুত ভাবে আবার সেই বাংলা শব্দ উচ্চারণ করেন। ঠিক ১৯৪৭ সালের আগে আমাদের ভারতে ইংরেজ যেমন ভাবে বাংলা উচ্চারণ করতেন। আমি দূর থেকে এদের দেখেছি, কোনদিন এদের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি।

আমি দেখেছি অনেক বাঙালি চিকিৎসা সূত্রে ব্যাঙ্গালোরে এসেই নাক সিটকিয়ে বলে এই ইডলি ধোসা আর টক খাবার তাদের গলা দিয়ে নামবে না। কথায় কথায় শুধু বলে একটু ডাল ভাত আলু সেদ্ধ হলেই চলবে, অন্য কিচ্ছু চাই না। এইসব মানুষের এই আচরণের জন্য আমারা কিন্তু ওদের দোষ দিতে পারি না। যারা প্রথমবার ব্যাঙ্গালোরে আসে ট্রেনে করে, এক আজব অভিজ্ঞতা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমত যে কয়টি হাওড়া থেকে সস্থা ট্রেন আছে ব্যাঙ্গালোরের জন্য, সব কয়টির খাওয়ার ব্যবস্থা অতি নিম্নমানের। বাধ্য হয়ে মানুষ প্লাটফর্ম বা হকারের থেকে পেটের জ্বালা নেভানোর জন্য কিছু একটা কেনে। এখানেই দুর্ভগের শেষ নয়!! প্লাটফর্ম বা হকার দুটোই সুযোগের সৎ ব্যাবহার করে। তারা জানে যে ট্রেনের খাবার খেয়ে মধ্যবিত্তের পেট ও মন ভরবে না। সুতরাং এদেরকেই মুরগি বানিয়ে কিছু business হয়েযাক!

১) ট্রেনের আণ্ডা বিরিয়ানি রূপী হলুদ রঙের ভাত ও সেদ্ধ ডিম আর কয়েক টুকরো সেদ্ধ গাজর
২) ট্রেনের চিকেন বিরিয়ানি রূপী হলুদ রঙের ভাত ও লবন হলুদে সেদ্ধ করা মুরগির এক টুকরো মাংস
৩) ইডলি সম্বর রূপী টক ইডলি এবং লালচে হলুদ রঙের স্বাদ হীন সম্বর
৪) ধোসা চাটনি রূপী নেতিয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা ধোসা আর সঙ্গে সাদা রঙের কিছু একটা তরল পদার্থ
৪) পেঁয়াজি, আলু বণ্ডা, সামোসার কথা ছেড়েই দিলাম

যে বয়স্ক মধ্যবিত্ত মানুষটি প্রথম ট্রেনে করে ব্যাঙ্গালোরে আসছেন তিনি তো এই সব খেয়ে অবসই বলবেন, “আমাদের ডাল ভাত আলু সেদ্ধ অনেক ভালো”। মনে মনে একটা ধারনা জন্মে যায় যে দক্ষিন ভারতের মানুষ রান্না করতে পারে না, শুধু টক খায়। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আজ পর্যন্ত আমার কোন দিন খাওয়াদাওয়ার অসুবিধা হয়নি এখানে। শুধু একটু চোখ কান খোলা রাখলেই সুস্বাদু সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার খাওয়া যায়। চোখ কান বন্ধ রাখলে কোলকাতাতেও আপনাকে বাসী মাছের ঝোল ভাত আর তিনদিন পুরনো সিঙ্গারা গরম করে খাইয়ে দেবে হাওড়া station এ। আমাদেরকে ভাগাড় মাংস কাণ্ড ভুলে গেলে চলবে না, তার মানে এই নয় যে কোলকাতায় ভালো খাবার পাওয়া যায় না। স্থান কাল পাত্র নির্ভর করে ভালো সুস্বাদু খাবারের জন্য।

আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আজ এখানে ব্যাঙ্গালোরের বাঙালি কিছু রেস্তরা ও স্থানের কথা বলবো যেখানে এলেই মনে হবে আপনি বাংলায় আছেন। আমার সঙ্গে হয়তো অনেকেই সহমত হবেন, আবার কেউ হয়তো সহমত হবেন না।

বাঞ্ছারাম


কেসি দাস


জিসান


আলিসান


লজিজ


ওহ! ক্যালকাটা


ভজহরি মান্না


এসপ্ল্যানেড


পাঁচ ফোড়ন

বাঙালিয়ানা

সরষে

হাওড়া ব্রিজ

টেস্ট অফ বেঙ্গল

কিচেন অফ জয়

এছাড়াও ব্যাঙ্গালোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ‘কলকাতা কাঠি রোল’ নামক অসংখ্য রোলের দোকান। এছাড়াও আছে সাদামাটা বাঙালি ভাত ডালের হোটেল। হোয়াইট ফিল্ডের কাঠগুড়ি এলাকায় আপনি পাবেন গোটা একটা বাঙালি এলাকা। ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসা সূত্রে প্রায় সকলেই এই এলাকায় একটিবারের জন্যও ঢু মারবেই। এখানে সবকিছুতে বাংলা বাংলা ভাব।

Share this post:
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *