Myntra , Jabong, flipkart বা amazon এখন সকলেই চেনে, সকলেই কিছু না কিছু কেনে। এযুগের স্লোগান “jo dikhta hai wohi bikta hai”. শহর থেকে মফস্বল বা গ্রাম, অনলাইন কেনাকাটা এখন সব যায়গায়। কিন্তু কয়েক বছর আগেও এমন ছিলো না। জামাকাপড় কিনতে গেলে আপনাকে স্ব-শরীরে জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে সাদা ধপধপে নরম গদিতে বসে দামদর করে জামাকাপড় কিনতে হতো। আমি যে সময়ের কথা বলছি, বেশি পুরনো না। এই ৯০ এর দশক তখন, আমার তখন শৈশব।
আমার জন্ম গ্রামে, যে গ্রামে বিদ্যুতের আলো শুধু মাত্র বিয়ে বাড়ি বা কোন অনুস্থান বাড়িতে দেখা যেত, তাও আবার দমকলের জেনারেটর চালিয়ে। আমার শৈশব কেটেছে হ্যারিকেনের আলোয়। হ্যারিকেনের এই আবছা কমলা আলোয় এক মায়া ছিল। সন্ধ্যা হলেই সারা গ্রাম সেই মায়া জালে জড়িয়ে পড়তো। হ্যারিকেনের আলোয় রান্নাবান্না, হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশুনা আবার হ্যারিকেনের আলোয় গল্প গুজব। কত স্মৃতি এই সন্ধার আলো আধারের মায়া জালে। আজ ২০১৯, গ্রাম সেই একই আছে তবে সেই মায়াজাল আর নেই। অনেক বছর হোলো গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে।
আজ হঠাৎ এত কথা মনে পড়ছে ছোট্ট একটা ঘটনা কে নিয়ে। গত সপ্তাহা আপিস থেকে ফেরার সময় আপিসের এক সহকর্মীর বাইকে কিছুটা রাস্তা এসেছিলাম। বাইক থেকে নামার সময় বাইকের পিছনের কোন এক জিনিসের ধারালো খোঁচা খেয়ে ঠিক হাতুর পাশের প্যান্টের কাপড় ফশ করে ছিঁড়ে গেলো। মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সখ করে ফর্মাল প্যানটা কিনেছিলাম এই কয়েকদিন মাত্র আগে, আর আজ এই অবস্তা। বাড়ি ফিরে মনঃস্থির করেছিলাম, এই প্যান্টটাকে হাফপ্যান্ট বানাব। আজ ছুটির দিন সেই প্যান্টটা নিয়ে দর্জির দোকানে গিয়ে হাজির। দর্জিকে বুঝিয়ে দিলাম কোথা থেকে কেটে সেলাই করে দিতে হবে। হাতে কাজ থাকায় দর্জির অনুরধে একটু বসতে হোলো দোকানেই, হাতের কাজ শেষ করেই সে আমার কাজ করে দেবে।
দোকানে বসে বসে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হারিয়ে গেলাম স্মৃতির অতল গভীরে। মনে পড়ে গেলো শৈশবের ‘ইংলিশ প্যান্ট’ এর কথা। আমাদের সময়ে ইংলিশ প্যান্ট আর হাউই শার্ট ছিল আমাদের মত ৯০ দশকের বাচ্ছাদের প্রধান পোশাক। আমাদের শৈশবে আজকের মত এত ফ্যাশনের জামাকাপড় ছিল না। তখন হয় দড়ি দেওয়া প্যান্ট বা ইংলিশ প্যান্ট। আর জামার মধ্যে মিঠুন চেক হাউই শার্ট। সে সময়ে মিঠুন চক্রবর্তী বাঙালির আইকন। এই সময় সবাই মিঠুন চেক জামা ও মিঠুনের মতো চুল রাখতো। আমাদের সময়ে যে সব ইংলিশ প্যান্ট দোকানে কিনতে পাওয়া যেত সব গুলির কোমরের পিছনের দিকে ইলাস্টিক দেওয়া থাকতো। এই ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট ছিল আমার খুবই অপছন্দের। কিন্তু কিছু করার নেই, ইলাস্টিক ছাড়া প্যান্ট সেযুগে আমি কোনদিন দেখিনি। দড়ি দেওয়া প্যান্ট আমি কোনদিন পরিনি। গল্প শুনেছি আমার বাবা কাকা নাকি দড়ি দেওয়া প্যান্ট পরে ইস্কুলে গিয়েছে। কাকার মুখে গল্প শুনেছি, কাকা নাকি এই দড়ি দেওয়া প্যান্ট পরে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে আইন পাশ করেছে।
আমার ভাগ্না এখন UKG তে পড়ে। ভাগ্নে এই বয়স থেকেই ইলাস্টিক ছাড়া জিন্স পরে। ইলাস্টিক দেওয়া জিন্স সে কিছুতেই পরে না। আমার জীবনে আমি দুই প্রকারের ইংলিশ প্যান্ট পরেছি। একটি দোকান থেকে কেনা, অন্যটি দর্জির দোকান থেকে বানানো। আমার প্রিয় ছিল এই দর্জির দোকান থেকে বানানো ইংলিশ প্যান্ট গুলি। বাবা ও কাকার পুরনো প্যান্ট থেকে বানানো হতো দুটি হাফ ইংলিশ প্যান্ট। যে দর্জি ইউরিয়া সারের হলুদ বস্তা কেটে হাট করার থলে বানিয়ে দিতো, সেই দর্জিই একটা ফুল প্যান্ট কেটে দুটি হাফ প্যান্ট বানিয়ে দিত। চমৎকার ছিল তার হাতের কাজ। যেদি ফুল প্যান্ট দর্জির দোকানে দিয়ে আসতো সে দিন থেকে আমার দিন গোনা শুরু হতো, কবে যে এই ফুল প্যান্ট নতুন রূপে ইংলিশ প্যান্ট হয়ে আসবে। যে দুটি কারনে আমার এই ইংলিশ প্যান্ট অতি প্রিয় ছিল, তার মধ্যে একটি তো ওই ইলাস্টিক। দ্বিতীয়টি হোল এই বানানো ইংলিশ প্যান্টে চেন থাকতো। দোকান থেকে রেডিমেড যে সব ইংলিশ প্যান্ট কিনতে পাওয়া যেত, প্রায় সব কটিতেই চেন থাকতো না, চেনের যায়গায় থাকতো দুটি করে বোতাম।
আজ হয়তো কেউ আর এমন ইংলিশ প্যান্ট পরে না। এখন সবকিছুই পাওয়া যায় রেডিমেড। আপনি যেমন চাইছেন, ঠিক তেমনি পাবেন। আজ দর্জির দোকানে বসে বসে ঠোটের করে হাসি ফুটে উঠেছিলো। মনটা ভরে উঠেছিলো শৈশবের স্মৃতে। আজ আমি সেই শৈশবের মতই ইংলিশ প্যান্ট করেছি, পিছনে ইলাস্টিক ছাড়া, চেন লাগানো।