নতুন বছরের শুরুতে বাঙালি বেড়াতে যাবে না? এতো ভাবতেই পারি না! হই-হই করে নতুন বছর স্বাগতম করা হলো ৩১ ডিসেম্বর রাতে। ১লা জানুয়ারী দল বেধে ভরিয়ে ফেললাম সিনেমা হল, সন্ধ্যায় গলা পর্যন্ত চললো বিরিয়ানি আর মাংস। এবার রাতে যে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাবো, তাও হতে দিলো না বন্ধুরা!! মাঝ রাতে ক্রিং-ক্রিং করে ফোন বাজিয়ে, ওপার থেকে খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উথে বলে উঠলো, “কাল ভোরে নন্দী হিলস যাওয়ার প্লান, get ready by 4 am”. ব্যাস, ঘুমের পিণ্ডি চটকে গেলো। কানে যাদের কাজী নজরুল ইসলামের গুরু মন্ত্র একবার ঢুকেছে, তাদের কাছে এসব কোন ব্যাপার না। গুণগুণ করে একবার মন্ত্র আওড়ে নিলাম “ থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে”। তার পর বুকে ফু দিয়ে ভোর সাড়ে তিনটেয় আলারাম লাগিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলাম।
ভোর সাড়ে তিনটেয় উঠে প্রাতঃকালীন শৌচ-ধৌত-স্নান করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কান মোড়া দিতেই আমার টাট্টু ঘোড়া চিঁহিঁহিঁ করে গর্জন করে ডেকে উঠলো, আমার যাত্রা শুরু। কথা মতো সকলে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হলাম, তার পর আমাদের গন্তব্বের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। কেলেঙ্কারি ঘটলো নন্দী হিলসে পউছে। পাহাড়ের উপরে ওঠার রাস্তা বন্ধ। করোনা ঠেকাতে সরকার বাহাদুর আদেশ দিয়েছে, শনিবার ও রবিবার পাহাড়ে ওঠা নিষেধ। এদিকে আমাদের মতোটি হাজার হাজার মানুষ পঙ্গপালের মত পাহাড়ে ওঠার রাস্তার মুখে এসে ভিড় জমিয়েছে। ওদিকে পুলিশের কি হাম্বিতাম্বি, পারলে সবাইকে জেলে পুরে দেয়। যাই হোক, কিছুক্ষণ এই তাণ্ডব দেখলাম পুলিশের। এদিকে ভোরে প্রাতঃকালীন শৌচ-ধৌত-স্নান করেই বেরিয়েছি, পেতে দানা পানি পড়েনি, খিদের চোটে পেট চো-চো করছে। সেই সময় আমাদের সামনের দোকান থেকে maggi/ম্যাগির গন্ধ প্রেম। সবাই মিলে হুড়মুড়িয়ে উড়ে গিয়ে জুড়ে বসলাম দোকানের চেয়ার টেবিলে। গফ্রাশে খেয়ে ফেললাম গরম গরম maggi/ম্যাগি। পেটের জ্বালা মিটিয়ে এবার চোখের খিদে মেটাবার পালা। ঠিক হোলো লেপাক্ষী বীরভদ্র মন্দির দেখতে যাওয়া।
লেপাক্ষী মন্দির হল ব্যাঙ্গালোর থেকে এক দিনের ভ্রমণ গন্তব্য। মন্দিরটি ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে লেপাক্ষীর ছোট্ট গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণু এবং তাঁর সহধর্মিণী লক্ষ্মীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এটি ১৬ শতকে বিজয়নগর রাজাদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটি তার অলঙ্কৃত স্থাপত্য এবং সুন্দর চিত্রকর্মের জন্য পরিচিত। মন্দিরে তিনটি প্রধান উপাসনালয় রয়েছে, প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রধান আকর্ষণ নন্দী ষাঁড়, যা একটি একক গ্রানাইট ব্লকে খোদাই করা হয়েছে। লেপাক্ষী মন্দির একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং অন্ধ্র প্রদেশের অন্যতম দর্শনীয় মন্দির।
ব্যাঙ্গালোর থেকে কিভাবে লেপাক্ষী মন্দিরে যাবেন?
ব্যাঙ্গালোর থেকে লেপাক্ষী মন্দিরে যাওয়ার কয়েকটি ভিন্ন উপায় রয়েছে। সবচেয়ে সহজ উপায় হল সরাসরি বাসে যাওয়া। বিকল্পভাবে, আপনি হিন্দুপুরে একটি ট্রেনে যেতে পারেন এবং তারপরে সেখান থেকে একটি স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সি নিতে পারেন। আপনি যদি thrill করতে চান তবে আপনি একটি বাইক ভাড়া করে সড়কপথে ভ্রমণ করতে পারেন। আপনি করুন না কেন, ভ্রমণে মোট চার ঘন্টা সময় নেওয়া উচিত। মন্দিরটি দর্শনযোগ্য এবং এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি।
লেপাক্ষী মন্দিরে কি দেখতে হবে?
লেপাক্ষী মন্দির ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের অনন্তপুর জেলার লেপাক্ষী গ্রামে অবস্থিত একটি সুন্দর হিন্দু মন্দির। মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণু এবং তাঁর সহধর্মিণী লক্ষ্মীকে উৎসর্গ করা হয়েছে এবং এটি জটিল ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম দ্বারা সজ্জিত। মন্দির কমপ্লেক্সে আরও অনেকগুলি উপাসনালয় এবং মন্দির রয়েছে, এটি একটি দিন অন্বেষণে কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা করে তোলে।
লেপাক্ষী মন্দিরের কিছু হাইলাইটের মধ্যে রয়েছে মূল মন্দিরের বাইরের দেয়ালে অত্যাশ্চর্য ভাস্কর্য, মন্দিরের অভ্যন্তরে জটিল খোদাই করা স্তম্ভ এবং ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর দৃশ্যগুলি চিত্রিত করা সুন্দর ম্যুরাল। মন্দির কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বারে একটি বড় নন্দী ষাঁড়ের মূর্তিও রয়েছে, যা ভারতের বৃহত্তম মূর্তিগুলির মধ্যে একটি বলে জানা যায়।
দর্শনার্থীরা কাছাকাছি লেপাক্ষী গ্রামটিও ঘুরে দেখতে পারেন, যেখানে কিছু আকর্ষণীয় মন্দির এবং স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। লেপাক্ষীর অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ হল ১৫ শতকের বীরভদ্র মন্দির, যা ভগবান শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছে। অন্যান্য হাইলাইটগুলির মধ্যে রয়েছে জৈন মন্দির, যেটি ১১ শতাব্দীর এবং মুসি নদীর সেতু, যা ১৬ শতকে নির্মিত হয়েছিল।