Share this post:

আমি গৃহপালিত ২পেয়ে জীব। আজকাল অনেক ৩পেয়ে, ৪পেয়ে বা তার অধিক পেয়ে জীব/মানুষ  ফেসবুকে পাওয়া যায়। এদের নিয়ে যদি লিখতে শুরু করি, তবে অনন্তকাল লিখে যাওয়ার মশলা ছড়িয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়ার আনাচে কানাচে। আজ যে বহু-পেয়ে জীব/মানুষের কথা লিখতে চলেছি, এদের নিয়ে আগেও একবার লিখেছিলাম। সব ভাষার মতই বাংলা ভাষায় আজ জোয়ার উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আজ প্রত্যেক তৃতীয় বেক্তি সাহিত্যিক। হয় কোনো গ্রুপে লেখেন, বা কোনো পেজে লেখেন, বা নিজের প্রোফাইলে লেখেন, বা নিজেই নতুন পেজ খুলে লেখেন। এই দলে আমিও পড়ি। আজ এই সব আলাদা আলাদা মানুষের মধ্য থেকে এক প্রকার মানুষ কে নিয়ে আলোচনা করবো। আমি চেষ্টা করবো এদের ভাবনা চিন্তার উপরে আলোকপাত করার। আমার এই আলো আর চোনা যদি আমার কোন বন্ধু বা পরিচিতর মনে আঘাত করে, তবে আমি বলবো –

“এই প্রবন্ধে সমস্ত চরিত্রই কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই তবে ফেসবুক বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে খুজলে অনেক নমুনা পাওয়া যাবে। কেউ যদি মিল খুঁজে পান তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ঘটনা মাত্র”

আমি সেই ২০০৭ থেকে কম্পিউটারে বাংলা অক্ষর লিখতে শুরু করি। প্রথমে বাংলা ওয়ার্ড (banglaword) নামের একটা সফটওয়্যার ব্যাবহার করতাম, এখন অভ্র ব্যাবহার করি। ২০০৭-০৮ এও আমি অর্কুটে বাংলা পোষ্ট লিখেছি, এখনো ফেসবুকেও লিখি। চোখের সামনে জন্ম নিয়েছে হাজার হাজার ফেসবুক কবি বা লেখক। আজ ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটা লেখায় আমার চোখ আটকে গেলো। বেশ মজার একটা প্রশ্ন, প্রশ্নটি এখানে হুবহু তুলে ধরলাম।

“যারা উচ্চমানের ভাল ভাল পোস্ট করেন দেখেছি তারা অন্যদের পোস্টে মতামত তেমন দেননা, কেন?”

মাত্র ৯ টি কমেন্ট, সব কয়টি উত্তর যুক্তিপূর্ণ। কমেন্টের লিংক নিচে দিয়েদিলাম, ইচ্ছা হলে পড়ে দেখতে পারেন। শুধু মাত্র একটা মজার কমেন্ট তুলে ধরলাম। https://www.facebook.com/groups/boipoka.2/permalink/1141320156018350

“পোস্টম্যানেরা চিঠি পড়ে না।”

এবারে আসি মূল কথায়। উপরের যে প্রশ্নটি নতুন কিছু নয়। এই প্রশ্ন প্রত্যেক ফেসবুক কবি বা লেখকের মনে সব সময়ই আসে। সব থেকে বেশি আসে সেই সময়, যখন তিনি বা তারা অনেক পরিশ্রম করে একটা লেখা লিখে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে, পেজে ও প্রোফাইলে শেয়ার করেও বিশেষ কোন লাইক, কমেন্ট বা বাহবা পান না। আমার মনেও এই প্রশ্ন দিনে বহু বার আসে, আমি ও মানুষ, আমিও ফেসবুক নেশাগ্রস্ত।

এবার বলি, অনেকেই এই প্রশ্ন নিয়ে কোন সঠিক উত্তর বা সমাধান পাননি, আবার অনেকেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে ফেলেছেন। এই সমস্যার একাধিক সমাধান আছে। আজ আমারা এই একাধিক সমাধানের মধ্য থেকে একটি সহজ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এই সমাধান শুধু মাত্র মহিলা লেখিকাদের জন্য, পুরুষ লেখক এই সমাধান ব্যাবহার করে ফল পাবেন না, বরং উপহাসের পাত্র হবেন।

আপনি ফেসবুক কবি / লেখিকা? আপনি ফেসবুকে লেখালিখি করেন? আপনার লেখায় এক ঘেয়ে কমেন্ট আসে? যেমন “খুব সুন্দর, দারুন, বাহ!!, ভালো লাগলো, ইত্যাদি ইত্যাদি”? আপনি আরো পাঠকের বাহবা চান? তবে সমাধান এখানে!! প্রথমেই আপনার ফেসবুক প্রফাইল খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিন। নিজের ছবি লাগাতে পারেন, তবে আপত্তি থাকলে নিজের লেখা বা অন্য কোন বিখ্যাত মানুষের লেখা একটা উক্তি সুন্দর করে ছবি পোষ্ট বানিয়ে নিজের প্রোফাইলে লাগাতে পারেন। কোন অবস্থাতেই গাছপালা, ফুল, পাখির বা অন্য চিত্র তারকার ছবি লাগাবেন না। এই সব ছবি কঠোর ভাবে লাগাতে নিষেধ করছি। কারন এখন সকলেই জেনে গিয়েছে, এই সব ছবির পিছনে কোন এক আতেল মার্কা মানুষের থাকে। আপনাকে intellectual ভাব দেখাতে হবে, অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী ভাব দেখাতে হবে।

এবার আপনাকে বিভিন্ন সাহিত্য ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে হবে। আলাদা আলাদা পেজে লেখা পাঠাতে হবে, সম্ভব হলে নিজেও একটা পেজ খুলতে পারেন। ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ হল আপনার পরিচিতি বাড়ানোর প্রধান মাধ্যম। প্রথম দিকে অ্যাডমিনদের একটু তেল লাগাবেন, তাদের সব পোষ্টে কমেন্ট ও লাইক করবেন। অন্য লেখা বা পোষ্টে Love reaction দিয়ে লম্বা একটা কমেন্ট করবেন। এখানে বলে রাখি, কমেন্ট করার জন্য অন্য লেখকের লেখা পুরোটা পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। মোটামুটি একটা সাধারণ কমেন্ট যা সব লেখায় দেওয়া যায় আগে থেকে লিখে রাখবেন, সব যায়গায় কপি পেস্ট করলেই চলবে। এমন করতে করতে দেখবেন আপনার পরিচিতি বেঁড়ে গিয়েছে, আপনি গ্রুপে বেশ পরিচিত। অনেকেই আপনাকে ইনবক্স করবে, সবাইকে খুব মিষ্টি করে উত্তর দিতে হবে। দিনে দিনে আপনার ফেসবুক বন্ধুর তালিকে কয়েক হাজারের সংখ্যায় পৌঁছে যাবে। এবার যেটা করতে হবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার আপনার প্রোফাইল সেটিং পাল্টাবার সময় এসেছে। সেটিং এ গিয়ে who can send you friend request এ গিয়ে করে দিন Friends of Friends. এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে গেলো। প্রথম পাখি, আপনি সবাইকে দেখিয়ে দিলেন যে আপনি আতিপাতি মানুষের বন্ধুত্ব গ্রহণ করেন না। আর দ্বিতীয় পাখি, সাধারণ লোক এখন আর আপনাকে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব না পাঠাতে পেরে Follow করবে, এতে আপনার follower বাড়বে। এই সেটিং এ শুধু মাত্র আপনার বন্ধুর বন্ধুরা আপনাকে প্রস্তাব পাঠাতে পারবে। তাহলে এক দিকে আপনার বন্ধু তালিকা একটু আস্তে আস্তে বাড়বে আর follower বাড়বে হুহু করে। এবার আপনি আপনার লেখা যেখানেই পোষ্ট করুণ না কেন, হাজার হাজার মানুষের feed এ পৌঁছে যাবে। তবে বেশি দিন এটা চলবে না। কারন সকলেই এই পথে হাটতে শুরু করেছে।

এবার আপনাকে শুরু করতে হবে অন্য খেলা। খেলার নাম “আনফ্রেন্ড অভিযান”। এই খেলা বেশ মজার। আপনি যখন দেখবেন যে উপরের সব ফন্দি করেও আপনার লেখা লোকে তেমন খাচ্ছে না, তখন এই খেলা শুরু করলেই আবার আপনি আগের fame ফিরে পাবেন। আমরা fame, like & share এর কাঙ্গাল। আমি নিজেও তাই। আনফ্রেন্ড অভিযান খেলা খুব সহজ। প্রথমে আপনাকে কোন একদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান খাওয়া করে ফোন বা ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়বেন। তার পর নিজের প্রোফাইলে স্ট্যাটাস পোষ্ট করুণ নিচের বয়ানের মত।

“আনফ্রেন্ড অভিযান শুরু করছি, দিনের শেষে জানাব কত গেল?”

বাস! চারিদিকে “ত্রাহি-ত্রাহি ” (বাঁচাও বাঁচাও)  চিৎকার উঠবে। সবাই insecurity feel করা শুরু করে দেবে। অনেকেই কমেন্ট করতে শুরু করবে, অনেকেই নিজের position জানার চেষ্টা করবে। এবার আপনাকে প্রত্যেকটি কমেন্টের উত্তর দিতে হবে খুব মিষ্টি করে। ব্যাস!! তাতেই হবে। দিনের শেষে দেখেবেন আপনার বাজার গরম। এখানে একটা কথা বলে রাখি, সত্যি সত্যি কিন্তু আপনি কাউকেউ বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন না। বিকালে একটা লেখা পোষ্ট করুণ প্রোফাইলে, গ্রুপে ও পেজে। বিষয় তো সেই একই, বস্তা পচা প্রেম, অথবা প্রেমের বিরহ, বা আজকাল যেটা সবাই খাচ্ছে, “পরকীয়া”। চড়চড়িয়ে উঠবে আপানর like, কমেন্ট আর শেয়ার।

সঞ্জয় হুমানিয়া
বেঙ্গালুরু – ১৩ নভেম্বর ২০১৮

Share this post:
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *