তাহলে একটা ছোট্ট গল্প বলি আমার জীবনের। সাতরাগাছির বাসে বসে লিখছি, বানান ভুল থাকলে ক্ষমা করে নেবেন। ছোটবেলা থেকে কঠোর শাসনে আমাকে বড় করা হয়েছে। শৈশবে কোনো প্রকার খেলাধুলা, পাড়ার অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশা, বন্ধুত্ব করা – কিছুই করতে দেওয়া হয়নি। শুধু এই ভয়ে যে আমার স্বভাব-চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে, আর পড়াশোনা হবে না।
শৈশব পার করে কৈশোরে পা দিলাম। নিয়ম কিন্তু সেই একই। ঘড়ি ধরে স্কুলে যাওয়া, বাড়ি ফেরা, পড়তে বসা, টিউশন যাওয়া – এই ছিল রুটিন। ক্রিকেট, ফুটবলসহ কোনো রকম খেলা আমি জীবনে খেলিনি। গুরুজনেরা বলতেন, “এসব করার সময় এটা না, জীবনে অনেক সময় পাবে ওসব করার জন্য।”
কৈশোর গিয়ে যৌবন এলো, জীবন চলল সেই একই নিয়মে। এমন সময়ও গেছে, যখন আমি প্রায় ঘর থেকে বেরই হতাম না। আসল ঘটনাটা এখানে। আমাকে কোনো বিয়েবাড়ি যেতে দেওয়া হতো না। নেমন্ত্রণ এলে হয় আমাকে জানানো হতো না, আর যদি জানতে পারতাম, তাহলে বাড়ির কেউই সেই বিয়েবাড়িতে যেত না, আমিও যেতাম না। আমার এই ৩৬ বছর বয়সে হাতে গোনা মাত্র চার-পাঁচটা বিয়েবাড়িতে গেছি।
এই বিয়েবাড়ি যেতে না দেওয়ার পেছনে এক দারুণ “মজার” কারণ আছে। আমার মা-বাবার ধারণা, ছেলে-মেয়েদের বিয়েবাড়ি যাওয়া উচিত না, যেতে দেওয়াও উচিত না। বিয়েবাড়ি হলো সব সর্বনাশের কারণ। বিয়েবাড়ি মানুষের জীবন শেষ করে দেয়, চরিত্র নষ্ট করে দেয়। বিয়েবাড়ি নাকি একটা ভয়ানক জায়গা। কারণ, এখানে গেলেই ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করার ইচ্ছা জাগবে, তখন আর পড়াশোনা হবে না, শুধু বিয়ে করতে ইচ্ছে হবে।
যদিও আমার পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত সেইভাবে আর হয়ইনি, যেমনটা আমার মা-বাবা চেয়েছিলেন। মানুষ যে জিনিস সহজে পায় না, তার প্রতিই হয়তো গভীর টান আর অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হয়। যাকে যে জিনিস থেকে যত দূরে রাখবেন, তার প্রতি তার আকর্ষণ ততই বাড়বে। হয়তো এই আকর্ষণের কারণেই আসল কাজগুলোই ভণ্ডুল হয়ে যায়। মাথার মধ্যে যদি সব সময় না-পাওয়া জিনিসগুলোই ঘুরতে থাকে, তখন কি আর অন্য কোনো কাজে মন বসে? ফলস্বরূপ, অন্য কাজগুলোও হয়তো ঠিকমতো হয় না।
জীবনে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতি তাই আমার এক অদম্য টান। কিন্তু আমাকে কেউই নেমন্ত্রণ করে না। আমার পরিচিতি কম, বন্ধুবান্ধব কম, সেই জন্যই হয়তো নেমন্ত্রণও কম। আমি স্বপ্নে বিয়েবাড়ি ঘুরে বেড়াই। ভিডিওতে দেখা কত সেলিব্রিটির বিয়েতে যে অ্যাটেন্ড করেছি, সবই স্বপ্নের মধ্যে। আমাকে হয়তো এই নিষ্ঠুর পৃথিবী স্বশরীরে বিয়েবাড়ি যেতে দেয়নি, কিন্তু সে স্পর্ধা আমি নিয়েছি আমার স্বপ্নে। বাস্তব বিয়েবাড়ি আমার কাছে স্বপ্নের মতো, কিন্তু স্বপ্নের বিয়েবাড়ি আমার কাছে একেবারে বাস্তব।
সঞ্জয় হুমনিয়া
২৯ নভেম্বর ২০২৩, বারাসাত, পশ্চিমবঙ্গ।


রূপ কথা
বিজয়া দশমীর রাতের গল্প
কালচক্র
শামুকের মুক্তি
অভিমানী বাবী
বৃষ্টির দিনে সেই প্রথম
ফেসবুকের অভিনন্দন পত্র
Gaighata Tornado 1983 | গাইঘাটা ঘূর্ণিঝড় ১৯৮৩ (চড়ুইগাছি টর্নেডো)