Share this post:

ঘড়ি ঘড়ি মেরা দিল ধাড়কে!!

সেই কবেকার কথা, কিভাবে সব যেন মনে রয়ে গেছে। মা বলে, এসব তো আমার মনে থাকার কথা না, আমি তো তক্ষণ অনেক ছোট। সত্যি তাই, কিভাবে আমার মনে আছে আমি নিজেও জানি না। এমন অনেক কিছুই আমার মনে আছে যা মনে থাকার কথা না। প্রথম পুকুরে স্নান করা, প্রথম ডিমের পোঁচ বানানো, প্রথম ছিপ দিয়ে মাছ ধরা, প্রথম আম গাছে ওঠা, প্রথম বাড়ির ছাদে ওঠা, প্রথম হাটে যাওয়া, প্রথম ইস্কুলে যাওয়া, ইত্যাদি।

আমাদের তখন রমরমা বাজার, অভাব বলতে কিছুই নেই সংসারে। গোলা ভর্তি ধান, পুকুর ভর্তি মাছ আর ব্যাংক ভর্তি টাকা। বাজারের মুদিখানা দোকানে খাতা চলে। সারা বছর কেনাকাটা চলে সেই খাতায়। পাওনা টাকা মেটানো হত দুই তিন মাস অন্তর অন্তর। হালখাতার সময় ঢালাও মিষ্টির ব্যবস্থা থাকতো আমাদের জন্য। কোথায় হারিয়ে গেলো সেই সব সোনালী দিন। এখন শুধু নামেই তালপুকুর, ঘোটি আর ডোবে না।

আমি তখন অনেক ছোট, মনে নেই কত বড়ো তখন। হাসেম কাকা আমাদের ট্রাকের (লরির) হেল্পার। আমাদের পাসের পাড়ার মানুষ। হাসেম কাকার মুখ মনে নেই এখন। মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে আসতো। একবার দেখলাম একটি সুন্দর ঘড়ি ওনার হাতে। আমি যে সময়ে কথা বলছি তখন হাত ঘড়ির কদর ছিলো। মানুষ প্রয়োজনে হাতে ঘড়ি পরতো। সময়টা আনুমানিক ৯০ দশকের প্রথম দিকে। হাসেম কাকার এই ঘড়িটির বিশেষত্ব ছিলো। কাঁটা নেই ঘড়িতে, ইংরেজি সংখ্যায় সময় দেখা যায়। ছোট কাঁটা আর বড়ো কাঁটা দেখে মনে মনে ৫ দিয়ে গুন করে সময় দেখার কোন ঝঞ্ঝাট নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়েই ঝট করে বলা যায় কটা বাজে। অন্তত আমার জন্য এটি খুবি সহজ ছিল। তখন আমি ইংরেজি সংখ্যা চিনতাম। সাধারণ ঘড়ি দেখে সময় বলা মানে আমার কাছে তখন ৫ এর ঘরের নামাতা পড়া। সেই বয়সে কার ভালো লাগে নামতা পড়তে?

বাড়িতে বায়না ধরলাম হাসেম কাকার মত ঘড়ি কিনে দেওয়ার। সেদিনের জন্য হাসেম কাকার ঘড়ি কয়েক ঘণ্টার জন্য আমার হাতে পরিয়ে দেওয়া হল। আমার বায়না থামালো হলো এই বলে যে, এ ঘড়ি তো বোম্বে থেকে কেনা, লরি যখন আবার বোম্বে যাবে তখন আমার জন্য এনে দেওয়া হবে। আমিও সেটা বিশ্বাস করে নিলাম। পরে অবশ্য মিটারের ঘড়ি একটা কিনে দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু তা মটেই হাসেম কাকার মতো না। হ্যাঁ, ইংরেজি সংখ্যায় সময় তাতে দেখাতো, তবে বাচ্চাদের ঘড়ি।

প্রায় ২৮/৩০ বছর লেগে গেলো হাসেম কাকার মতো ঘড়ি কিনতে। ২০২২ সালে এখন সে ঘড়ি vintage আখ্যা পেয়ে গেছে। অনলাইনে হঠাৎ একদিন চোখে পড়লো ঘড়িটি। বিদ্যুৎ বেগে আমার স্নায়ু সজাগ হয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়লো। মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার স্মৃতিকথা। চোখের সামনে ভেসে উঠলো আবছা আবছা ঘোটনা। ছোট হাতে প্রাপ্তবয়স্কদের একটা ঘড়ি, ঢলঢল করছে আর আমি বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা ঘড়ি হাতে হেটে বেড়াচ্ছি আর অতি সহজে সময় দেখছি। ১২ঃ০৩, ১২ঃ০৪, ১২ঃ০৫, ১২ঃ০৭। কাকা হয়তো এখন আর সে ঘড়ি পরে না বা হয়তো সে ঘড়ি নেই তার কাছে, কিন্তু আমার স্মৃতে রয়ে গেছে। ঘড়ি ঘড়ি মেরা দিল ধাড়কে!! Casio Vintage A158WA-1

Share this post:
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *