শৈশবের ইচ্ছা পূরণ
চুল নিয়ে আমার চিরকালের খুঁতখুঁতানি। বর্তমানে মাথায় চুল কম, যৌবনে লজ্জার কারনে তেমন কোন চুলের স্টাইল করতে পারিনি, কৈশোরে মিঠুন ছাঁট দিতে পারিনি, আর শৈশবের কথা শুনলে হয়তো পাঠকগণ হাউহাউ করে কেঁদে উঠবেন।
সেলুনে বসে বসেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একটু ভাবলাম, সময় পাল্টেছে। আমার শৈশবে বছরে দুই তিনবার নেড়ে করে দিতো। সান্তনা দিতো এই বলে যে বড়ো হলে ভালো ঘণ চুল হবে, তখন যত খুশি লম্বা চুল রেখে স্টাইল করা যাবে। আমিও ছেলে ভোলানো কোথায় ভুলে থাকতাম। বর্তমানে মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে মন বলে ওঠে, “কই এখন তো আমার মাথায় ঘণ চুল নেই!! সব ধাপ্পাবাজি”।
যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন ঘনঘন নেড়া করে দিতো। একটু বড়ো হলে গ্রামে একমাত্র বৃদ্ধ নাপিত আসতো আর ইটে বসিয়ে ছোট করে চুল ছেঁটে দিতো। আমার শত আপত্তি সত্ত্বেও নাপিত দূরে দাড়িয়ে থাকা ঠাকুমার ইশারাকেই প্রাধান্য দিতো। এই ছোট করে চুল ছাঁটা কে ঠাকুমা বলত তেল কম ছাঁট। ছোটবেলা থেকেই আমার মাথা মোটা, আর এই তেল কম ছাঁটের দৌলতে চুল কাটানোর পরে আমাকে ঠিক ওলের মত দেখতে লাগতো। আমি বহুবার আয়নাতে নিজেকে দেখে ভাবতাম, ইস!! কেমন যেন ওলের মত মাথা আমার!!
একটু বড়ো হলে, ধরমপুর বাজারে গিয়ে টিনের ছাউনিওয়ালা সেলুনে কাঠের চেয়ারে কাঠের তক্তায় বসিয়ে চুল ছাটা। এই সময় নাপিত মাস্টার কে কিছু বলা লাগতো না, তারা জানতো সেই সময়ে বাচ্চাদের চুল ছাঁটা মানে সেই ছোট করে দেওয়া। ভাবলে এখনো চোখে পানি চলে আসে।
ব্যাঙ্গালোরে এক সেলুনে এক বাচ্চার চুল কাটানোর সময় তার বাবা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার ছেলের এই অল্প বয়সেই স্টাইল করে চুল কাটাচ্ছেন কেন? উত্তরে সে বললো, “আমি আমার শৈশবের ইচ্ছা পূরণ করছি আমার ছেলেকে দিয়ে। আর সব থেকে বড় কথা, বড়ো হলে ওর মাথায় চুল নাও থাকতে পারে, তাই এখন সখ মিটিয়ে নিচ্ছি্লা “। মনে মনে ভাবলাম, এই ভদ্র লোকের আর আমার শৈশবে অনেক মিল ছিলো। ?
জানিনা ৯০ দশকের বাবা মা দের কি শত্রুতা ছিলো তাদের ছেলে মেয়েদের চুলের উপরে। বড়ো চুল না হোক, অন্তত একটু মানানসই করে তো চুল কেটে দিতে পারতো? তা না করে, হয় নেড়া আর না হয় একদম ছোট করে তেল কম ছাটা।
এখন শুধু ছবি বিশ্বাসের মত একটা ডায়লগ মারতে ইচ্ছে হয়, “দাও, ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও আমার সেই শৈশবের বচ্ছর”।
সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
১৬ই এপ্রিল ২০২২