ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলার কমমাসান্দ্র গ্রামে অবস্থিত এশিয়া বৃহত্তম এবং উচ্চতম শিবলিঙ্গ, মূর্তিটি উচ্চতা ১০৮ ফুট, যেটি কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির নামে সকলের কাছে পরিচিত। সারা বছর প্রায় ২-৪ লক্ষেরও বেশি ভক্ত এই মন্দির দর্শন করতে আসেন সমগ্র বিশ্ব থেকে। বিশেষ করে মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক ভক্ত ও দর্শনার্থী এখানে উপস্থিত হয়। সিনেমার গপ্পে আছে যে কোলারের সোনার খনি রকি ভাইয়ের এলাকা! কোলার থেকে কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির মাত্র ১ ঘণ্টার রাস্তা, প্রায় ৩১-৩২ কিলোমিটার। কোলারে কীভাবে পৌঁছাবেন? কোলারের নিকটতম বিমানবন্দরটি ব্যাঙ্গালোর। বিমানবন্দর থেকে, গাড়ি ভাড়া করতে পারেন বা সরকারি বাসের উপর নির্ভর করতে পারেন। রেলপথে যেতে চাইলে অবশ্য অনেক রাস্তা খোলা আছে। ব্যাঙ্গালোর, ম্যাঙ্গালোর, হাসান, কোলার এবং হুবলি থেকে কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির পৌঁছানো খুবই সহজ। আর যদি নিজস্ব বা ভাড়া গাড়ি করে যেতে চান তবে আপনাকে কোলার হয়ে যেতে হবে। কোলার ব্যাঙ্গালোর থেকে ২.৫ – ৩ ঘন্টার দূরত্বে।

এই মন্দিরে এক কোটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে তাই এর নামকরণ করা হয়েছে কোটিলিঙ্গেশ্বরা। কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দির দেখার সেরা সময় জুলাই থেকে জানুয়ারির মধ্যে, আমি অবশ্য জুন মাসের চড়া রোদে এসেছিলাম। দর্শনের সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু মাত্র ২০ টাকা, গাড়ি পার্কিং চার্জ মাত্র ৫০ টাকা আর জুতো বাইরে জমা রাখতে মাত্র ৩০ টাকা। ক্যামেরা নিয়ে আপাতত প্রবেশ বন্ধ, তবে মোবাইল ফোন নিয়ে ছবি বা ভিডিও তোলা যাবে।

কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরটি ১৯৭৯ – ১৯৮০ সালে স্বামী সম্ভ শিব মূর্তি (Swami Sambha Shiva Murthy) নির্মাণ করেছিলেন। প্রথম লিঙ্গটি ১৯৮০ সালে স্থাপন করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে মন্দিরে একের পর এক লিঙ্গ  স্থাপন করা হয়েছিল। এই মন্দিরে শিব মূর্তি ছাড়াও রয়েছে নন্দীর মূর্তি, এর উচ্চতা ৩৫ ফুট। এই মূর্তিটিও বিশ্বের সব থেকে বড় নন্দীর মূর্তি। প্রায় সব শিব মন্দিরেই নন্দীর মূর্তি দেখা যায়, কিন্তু এই বৃহৎ মাপের নন্দীর মূর্তি আর কোনও মন্দিরে নেই। যে কারণে কর্ণাটকের কোটিলিঙ্গশ্বর মন্দিরটি সারা বিশ্বের নজর কাড়ে।

মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে শিব ছাড়াও বিভিন্ন দেবদেবীর প্রায় ১১টি মন্দির রয়েছে। প্রথম রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর মন্দির, ভগবান ব্রহ্মা এবং মহেশ্বর মন্দির, এর পরে রয়েছে ভগবান কোটিলিঙ্গেশ্বরের মন্দির। ভিতরে রয়েছে দেবী অন্নপূর্ণেশ্বরী মন্দির, দেবী কারুমারী আম্মা মন্দির, ভগবান ভেঙ্কটারমণি স্বামী মন্দির, ভগবান পান্ডুরঙ্গ স্বামী মন্দির, ভগবান রাম – সীতা এবং লক্ষ্মণ মন্দির, ভগবান পঞ্চমুখ গণপতি মন্দির, ভগবান অঞ্জনেয়া মন্দির এবং কানকানি দেবী মন্দির। কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে আপনি নিজেও শিব লিঙ্গ স্থাপন করতে পারেন। নিজের শিব লিঙ্গ স্থাপনের মূল্য পড়বে প্রায় ৬০০০ টাকা। ভক্তরা অনেকেই এই মন্দিরে শিব লিঙ্গ স্থাপন করে থাকে, এতে পূর্ণ্য অর্জন হয়, বলে প্রচলিত।

সরকার এই মন্দিরটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং সারা বিশ্ব থেকে শত শত পর্যটক এসে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কোলার কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে পূজা প্রতিদিন পুরোহিতদের দ্বারা সমস্ত স্থাপিত শিবলিঙ্গে পূজা করা হয়। মন্দিরে ভক্তদের সুবিধা জন্য মন্দির চত্বরে বিশ্রামাগার রয়েছে। আমারা অবশ্য ১দিনের ট্যুর করেছিলাম। সকাল সকাল ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলার হয়ে ৩ ঘন্টায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। এখানে দুটি গাড়ি রাখার যায়গা আছে, প্রথমটি মন্দির চত্বরের বাইরে আর অন্যটি মন্দির চত্বরের ভিতরে। আমারা ভুল করে বাইরে রেখেছিলাম, এবং মন্দির দর্শন করে ফেরার সময় বুঝলাম টানা রদ্দুরে দাড়িয়ে থেকে আমাদের গাড়ি একটি মাইক্রো ওভেনে পরিণীত হয়েছে। আপনারা যারা আমার এই ব্লগ পড়ছেন, তার অবশ্যই এই ভুল করবেন না। আপনারা অবশ্যই মন্দির চত্বরের ভিতরের গাড়ি রাখবেন, এখানে ছাউনি করা আছে, আপনার গাড়ি মাইক্রো ওভেন হবে না।

মন্দির চত্বরে ঢোকার পরে সাদা রঙ করা পায়ে হাঁটার রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। ভুল করেও কালো পাথরে উপর দিয়ে হাটবেন না, হাঁটলেই আপনার পায়ে ফস্কা পড়বে। আনুমানিক ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগলো গোটা মন্দির চত্বর ঘুরে দেখতে। আমার তো বেশ ভালোই লাগলো। যারা ব্যাঙ্গালোর থাকেন তারা ১দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

আমার কথা ফুরালো, নটেগাছটিও মুড়োল এবার সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন। বেরিয়ে পড়ুন নতুন কোন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। জীবন খুব ছোট, উপভোগ করে নিন।

সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
১৮ই জুন ২০২২

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *