তোমার সঙ্গে আমার অনেক বৃষ্টির স্মৃতি আছে। আগামী দিনগুলোতে এমন আরও মুহূর্তে ভরে উঠুক আমাদের ঝুলি—এই প্রার্থনাই করি বারবার।
যতদূর মনে পড়ে, প্রথম ভিজেছিলাম আমরা মোটরবাইকে। তুমি তখন নতুন নতুন বাইক চালানো শিখছো। তোমার বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা প্রায় প্রতিদিনই খুব সকালে বেরিয়ে পড়তাম বাইক নিয়ে। তুমি চালাতে, আমি পিছনে বসে থাকতাম।
সেদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আমরা কল্যাণী এক্সপ্রেস ধরে অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছিলাম। আকাশ তখনও ছিল স্পষ্ট, কিন্তু বেলা বাড়তেই তার রঙ বদলাতে শুরু করল।
তুমি বললে, “আর গিয়ে কাজ নেই, এবার ফিরে চলো। জোর বৃষ্টি নামবে।”
বাইক ঘোরালাম ওয়্যারলেস গেটের দিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। মনে হলো, প্রকৃতি আমাদের মনের কথাই শুনে ফেলেছে। হয়তো আমরাই চেয়েছিলাম একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে।
মন থেকে চাইলে প্রকৃতি যে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদের ইচ্ছেপূরণে নেমে পড়ে—সেদিন বুঝেছিলাম।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। আমরা বাইকে ভিজতে ভিজতে একটুকরো ছাউনির খোঁজে দাঁড়ালাম এক পেট্রোল পাম্পে। জামাকাপড় ভিজে একসা। শেডের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেও বৃষ্টির ফোঁটা যেন আমাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল।
কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা, আর আমাদের চারপাশে একে একে জমে উঠল আরও কিছু পথচারি, যাত্রী, আর বৃষ্টির গল্প।
ঠিক তখনই আলোআঁধারির বৃষ্টির পর্দা ঠেলে এগিয়ে এলো এক দেবদূত চা-ওয়ালা। মনে হলো, প্রকৃতিই যেন পাঠিয়েছে তাকে। উষ্ণতার প্রয়োজনে ঠিক এমন কিছুই তো আমরা চাইছিলাম।
আমরা চা-বিস্কুট খেলাম, আর বারবার একে অপরের চোখে তাকিয়ে হেসে উঠছিলাম।
তখনও বৃষ্টি পড়ছিল, কিন্তু তার চেয়েও বেশি পড়ছিল আমাদের মনের ভেতরে এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
বৃষ্টি থামলে, বাড়ির পথ ধরলাম। প্রথমে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে, পরে আমি ফিরলাম নিজের গন্তব্যে।
জানো, সেদিন আর অফিস যাইনি। বাড়ি থেকেই কাজ করেছিলাম।
প্রকৃতির কাছে আবারও প্রার্থনা,
এমন সহস্র স্মৃতি হোক… শুধু তোমার আর আমার।
সঞ্জয় হুমানিয়া
১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ বারাসাতে