Share

Devarayana Durga & Shivaganga Hills, Tumkur

দেবরায়ণ দুর্গা ও শিবগঙ্গা পাহাড়, তুমকুর

সীমানা পেরিয়ে, দুহাত বাড়িয়ে, মন যেদিকে চায়! কথাটা সত্যি-সত্যি, সত্যি হয়ে গেলো ২০২১এর ১৫ই অগাস্ট। সত্যি বলতে আগের রাত থেকেই মনে মনে একটা কবিতা automatic চলছিলো। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের “স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?” ভ্রমণ প্রিয় বাঙালি বেঙ্গালুরুতে থেকেও সুযোগ খুঁজে বেড়ায় পিকনিক বা বেড়াতে যাওয়ার জন্য। একে রোববার, তার উপরে স্বাধীনতা দিবস! ভাবা যায়? আজ ঘরে থাকা অসম্ভব একজন বাউন্ডুলে বাঙ্গালির জন্য। প্লান ছিলো long drive + দেবরায়ণ দুর্গা পাহাড় ( Devarayana Durga)  + শিবগঙ্গা পাহাড় ( shivaganga )।

বেঙ্গালুরু থেকে একদিনের ভ্রমণের জন্য দেবরায়ণ দুর্গা / Devarayana Durga পাহাড় ও মন্দির একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। আমাদের প্লান অনুযায়ী সকাল সকাল বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে NICE road হয়ে তুমকুর হাইওয়ে হয়ে দেবরায়ণ দুর্গা / Devarayana Durga hills পাহাড়। আপনি যদি দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে থাকেন তবে আমাদের মতই NICE road হয়ে টুমকুর রোডে উঠতে পারেন। আর আপনি যদি পূর্ব বেঙ্গালুরুতে থাকেন, তবে Outer Ring road নিতে পারেন। Hebbal এবং Jalahalli হয়ে হাইওয়েতে প্রবেশ করতে পারেন। পশ্চিম বঙ্গালুরুতে যারা থাকেন, তারা ভাগ্যবান, তাদের জন্য হাইওয়ে তো দোয়ারে সরকারের মত। ?

দেবরায়ণ দুর্গার / devarayanadurga প্রাচীনকালে মূলত আনিবিদ্দাসারী নামে পরিচিত ছিলো। তারপর দেবরায়ণ দুর্গা / Devarayana Durga নামকরণ করেন মাইসোরের রাজা শ্রী চিক্কদেবরাজ ১৬৯৬ সালে। দেবরায়ণ দুর্গার তিনটি মূল আকর্ষণ। প্রথম আকর্ষণ যোগ নরসিংহ মন্দির, দ্বিতীয় আকর্ষণ ভোগ নরসিংহ মন্দির এবং তৃতীয় আকর্ষণ নামাদা ছিলুমি। এই তিনটি স্থানেরই নিজস্ব একটি একটি পৌরাণিক অতীত রয়েছে।

ইতিহাস ঘেটেঘুটে যা জানলাম, যোগ নরসিংহ (Yoga Narsimha) সেই স্থানে নির্মিত হয়েছিলো যেখানে ভগবান ব্রহ্মা দীর্ঘ ও গভীর তপস্যা করার পর, ভগবান বিষ্ণু তাঁর নরসিংহ অবতারে এবং দেবী লক্ষ্মী এসেছিলেন। ভগবান ব্রহ্মা যখন তপস্যায় মগ্ন ছিলেন, তখন দুরবাশা মুনি তাঁর কাছে গিয়ে নরসিংহের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। সেখানেই পরবর্তী সময়ে ভোগ নরসিংহ মন্দির (Bhoga Narsimha Temple) নির্মিত হয়।

মূল পাহাড় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে নামদা চিলুমে বা নামদা ছিলুমে (Namada Chilume)। এর ইতিহাস জানতে আমাদের রামায়ণের সময়ে ফিরে যেতে হবে। বলা হয়ে থাকে যে, নির্বাসনে থাকা কালীন ভগবান রাম এবং সীতা পাহাড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিলেন। একদিন, যখন ভগবান রাম তার কপালে চন্দনের প্রলেপ লাগানোর জন্য জল খুঁজছিলেন, তখন তিনি কিছুই খুঁজে পেলেন না। তখন তিনি একটি পাথরে একটি তীর ছুড়লেন, যেখান থেকে জল প্রবাহিত হয়েছিলো। নামদা চিলুমে বা নামদা ছিলুমে (Namada Chilume) হলো সেই ঝর্ণা।

বেঙ্গালুরু থেকে এক দিনের ভ্রমণের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত জায়গা। কিন্তু আমাদের জন্য এই এক দিনের ভ্রমণ একটু অন্য স্বাদের হয়ে গিয়েছিলো। দেবরায়ণ দুর্গা মন্দিরে / Devarayana Durga temple পৌছনোর জন্য তুমকুর হাইওয়ে থেকে আপনাকে বাম দিকে পাহাড়ে ওঠার রাস্তা নিতে হবে। এখানেই আমরা বাধা পেলাম। দ্বিতীয়বার ২০২২এ আর একবার এসেছিলাম এখানে, সেই ব্লগ পড়তে এই লিঙ্ক ক্লিক করুন > Devarayana Durga Hills, Tumkur | দেবরায়ণদুর্গা ও শিবগঙ্গা পাহাড়, তুমকুর

Covid19 এর কথা মাথায় রেখে সরকার বাহাদুর ১৫ অগাস্ট রোববার এই মন্দির বন্ধ রেখেছিলেন। এ খবর আমার জানতাম না, জানলে কি এত প্ল্যানিং করে এত দূরে আসতাম? কি আর করা যাবে, রাস্তায় দাড়িয়ে আমাদের দেবরায়ণ দুর্গা পাহাড় ভ্রমণের আশালতা নির্মূল হয়ে গিয়েছিলো। মন কে সান্ত্বনা দিলয়াম। একবার এসেই যখন পড়েছি, তখন কিছু একটা তো করেই ফিরবো। আমার মনে track বাজতে শুরু হয়ে গিয়েছে, “Tere dar pe aaya hoon, Kuchh kar ke jaaunga, Jholi bhar ke jaaunga, Ya mar ke jaaunga”। আমাদের মতই অনেকে এসে জানতে পেরেছে যে মন্দির বন্ধ। সকলেই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। অনেকে আবার খাওয়াদাওয়াও শুরু করে দিয়েছিলো। মধ্যাহ্নভোজনের সময় হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের সঙ্গে ছিলো Home made বিরিয়ানি। টুমকুর হাইওয়েতেই একটু ফাঁকা জায়গা দেখে আমারাও আমাদের পিকনিক শুরু করে দিলাম।

এবার আমাদের গন্তব্য শিবগঙ্গা / shivaganga পাহাড়। ব্যাঙ্গালোর ফেরা পথেই পড়বে শিবগঙ্গা পাহাড়, এটি ব্যাঙ্গালোর জেলার অন্তর্গত।  শিবগঙ্গা পৰ্ব্বতে প্রতি বৎসরেই অনেক তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়। ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারলাম যে এই পৰ্ব্বতে ওঠবার যতটি সোপান বা  সিঁড়ির ধাপ আছে, এই স্থান থেকে কাশী তত যোজন (চার ক্রোশ পরিমাণ দুরত্ব) দূরে অবস্থিত। অনেকেই মনে করেন এই পৰ্ব্বত প্রদক্ষিণ করলে কাশী তীর্থ দৰ্শন করার পূণ্য অর্জন হয়। wikisource.org

শিবগঙ্গা মন্দির / shivaganga temple আমারা আর উঠলাম না। নিচে থেকেই দর্শন সারলাম। সত্যি বলতে আমাদের মধ্যে ১৫০ ধাপ সিঁড়ি পায়ে হেটে পাহাড়ের উপরে ওঠার মত শরীরে ও মনে আর বল ছিলো না। নিচ থেকেই ছবি তুললাম, একটু বিশ্রাম নিলাম। এবার বাড়ি ফেরার পালা। ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার পালা। তবে দিনটা মন্দ কাটেনি, হোই হোই আর হুহু করে স্বাধীনতা দিবস কেটে গেলো। তবে মনের গোপন ইচ্ছে এই যে আর একবার দেবরায়ণ দুর্গা পাহাড় ও মন্দির অবশ্যই আসবো।

নিচের ভিডিওতে আমাদের এই একদিনের ভ্রমণের কিছু মুহূর্ত আমার ক্যামেরা বন্দী করে রেখেছি। আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। ভালো লাগলে চ্যানেলটি subscribe করবেন অবশ্যই। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

সঞ্জয় হুমানিয়া
১৬ অগাস্ট ২০২১ – ব্যাঙ্গালোর

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★