অসহায়

মানুষ কখন যে অসহায় হয়ে পড়বে, তা কেউই বলতে পারে না। ধরুন, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। আপনার কাছে ছাতা আছে! আপনি তা খুললেন, কিন্তু দেখলেন ছাতার কাপড় ছিঁড়ে গেছে বা সিক ভেঙে গেছে। অন্য সবাই সুন্দর ছাতা খুলে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে, আর আপনি ভাঙা ছাতা হাতে অসহায়ের মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই সময় যে অনুভূতি হয়, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারে।


অসহায়

কথায় আছে, “মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।” তবে বাস্তবে এমন ঘটনা কখনো ঘটতে দেখিনি। তবে বেলগাছের নিচে ন্যাড়ার মাথায় বেল পড়তে দেখেছি। কাল রাতে অফিস থেকে বের হয়ে ফাঁকা বাস পেয়ে মনে বেশ ভালো লাগছিল। প্রতিদিনের মতো জানালার পাশে সিট খালি ছিল। বাসের সামনের সিটটি বয়স্কদের জন্য বরাদ্দ। সাধারণত আমি সেদিকে তাকাই না, ভবিষ্যতের জন্য সেই সিট যেন রেখে দিই।

কিন্তু কাল রাতে হঠাৎ করে সেই সিটে বসে পড়লাম। বাস চলতে শুরু করল। ফ্লাইওভারের শুরুতেই বাস ভর্তি হয়ে গেল। দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও রইল না। ঠিক সেই মুহূর্তে এক বৃদ্ধ কাঁপতে কাঁপতে বাসে উঠলেন। যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা সবাই আমার দিকে ঘৃণাভরা চোখে তাকালেন। তাদের চোখে-মুখে ছিল উপহাসের ছাপ। বাধ্য হয়ে আমি সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বৃদ্ধটি সিটে বসতেই ম্যাজিকের মতো বদলে গেলেন! পকেট থেকে iPhone বের করে ফেসবুকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এই বৃদ্ধ যে আসলে এক যুবক, তা তখনই বুঝলাম।


অসহায়

অসহায় হওয়া কাকে বলে, তুমি কি বুঝবে রমেশবাবু? বর্ণপরিচয়ের গোপাল আর রাখালকে সবাই চিনল, কিন্তু মাধবকে কেউ চিনল না। গোপাল IIT থেকে পাশ করে MNC-তে চাকরি করছে। রাখাল সিন্ডিকেটের ব্যবসায় এখন রাঘববোয়াল। গোপাল আর রাখালকে আগে যেমন লোকে চিনত, এখনও চিনছে।

আর মাধব? না সে পড়াশোনায় ভালো ছিল, না দুষ্টমীতে। মধ্যবিত্ত সংসারের চাপে তার শৈশব হারিয়ে গেল। কৈশোর ডুবে গেল উপদেশ আর আদর্শের ভারে। যৌবন এলোই না অর্থাভাবে।

আজ মাধব বার্ধক্যে পা রেখে খেলার মাঠ বা টিভির পর্দায় ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলা দেখে। এক অসহায় অনুভূতি তাকে গ্রাস করে। মাধবের জীবনে কোনো খেলাই খেলা হলো না। ছোটবেলায় বাড়ির কড়া আদেশ ছিল, “ওসব খেলার অনেক সময় পাবি জীবনে, এখন একটু কষ্ট করে পড়।” মাধবের হাতে আজ সময় খুব কম, কিন্তু সেই খেলার সময় আর এলো না।

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *