Share

কোথায় হারিয়ে গেলে?

কোথায় হারিয়ে গেলে? এটি একটি রেডিও বা বেতার অনুষ্ঠানের নাম। সবে মাত্র কলকাতায় Frequency Modulation এর সাহায্যে রেডিওতে বা বেতারে প্রথম FM রেডিও শুরু হয়েছিল। খুব অল্প দিনেই আমার মন ছুয়ে গিয়েছিল এই অনুষ্ঠানটি। তখন মোবাইল ফোন, অর্কুট, ফেসবুক ছিল না। ইন্টারনেট হয়তো আজকের মত এতটা সহজলভ্য ছিল না। আমার মত যারা কৈশোরের গণ্ডী পেরিয়ে সবে মাত্র যৌবনে পা রাখছি, তারা হয়তো এই অনুষ্ঠানটির নাম শুনেছে। এই অনুষ্ঠান একটু অন্য স্বাদের। স্রোতার চিঠি পড়া হতো এই অনুষ্ঠানে, এবার আপনি ভাবতেই পারেন যে এতা অন্য স্বাদ কি আছে? ধরুন আপনি ট্রেন করে কথাও যাচ্ছেন, ট্রেনের কামরায় এক অপরিচিত মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হয়ে গেল। মানুষটিকে হয়তো আপনার ভালো লেগে গেল বা তার কোন আচরণ আপনার মনে দাগ কেতে গেল। পরের কোন একটা স্টেশনে সেই মানুষটি হয়তো নেমে গেলো। এবার ভাবুন, এই চলে যাওয়া মানুষটিকে আপনি চেনেন না, বড্ড জোর শুধু নামটি জানেন হয়তো। কয়েকদিন পর বা কয়েক বছর পর এই ঘোটনাটি আপনার মনে পড়ে গেলো এবং সঙ্গে সেই মানুষটির কথা। খুব ইচ্ছা করলো আপনার সেই মানুষটিকে খুঁজে বার করার বা আবার দেখা করার। আপনি কি করবেন তখন? “কোথায় হারিয়ে গেলে” অনুষ্ঠানে আপনি সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটা চিঠি লিখলে, অনুষ্ঠানে সেই চিঠিটি পড়া হতো। আমি যত দিন এই অনুষ্ঠান শুনেছিলাম, তার মধ্যেই অনেক মানুষ তাদের এই হারিয়ে যাওয়া মানুষ কে খুঁজে পেয়েছিলেন।

রাতে শুয়ে শুয়ে কানে কাছে রেখে ছোট্ট রেডিওতে শুনতাম এই অসাধারণ অনুষ্ঠানটি। আজকের যুব সম্প্রদায়ের কাছে হয়তো এতা বোকাবোকা মনে হবে। আজ ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে একটা পুরনো পোষ্টে আমার চোখে আঁটকে গেলো। পোষ্টটি আসলে একটা চিঠি, সেই “কোথায় হারিয়ে গেলে অনুষ্ঠানে” লেখা একটা চিঠি। না, আমার লেখা চিঠি না। অন্য একজনের লেখা চিঠি, তিনি তার ফেসবুকে সেয়ার করেছিলেন February 19, 2015 রাত 11:00pm. চিঠিটি এখানে তুলে ধরলাম।

আকাশবানী কলকাতার F M RAINBOW’র “কোথায় হারিয়ে গেলে ” অনুষ্ঠানে আমার লেখা একটি চিঠি —

কেউ কেউ থেমে গেছি, কেউ কেউ থেমে যাব যাব করছি, কেউ কেউ ইঁদুরের মত খড়কুটো জড়ো করছি, কেউ বা অমল কান্তি হওয়ার নেশায় ছুটছি …..ছুটছি….আর ছুটছি, যদি একটু রোদ্দুর হতে পারি ! হীরের মত ঝকঝকে ছিল দিনগুলো। রবি’র টুনটুনি পাখি, রাজু’র একের পর এক প্রেম কে ছোঁয়ার চেষ্টা, শেখরে’র প্রথম প্রেমে সফল হয়ে ‘সব পেয়েছির দেশকে পাওয়া, বিকলের ফুটবল, হোস্টেলের ক্রাম টুর্নামেন্ট, স্কুলের পুকুরের মাছ চুরি, ডাব চুরি, প্রথম সিগারেট খাওয়া, লতিকাকে দীপু দার চিঠি পৌঁছে দেওয়ার আনন্দ, রণজীৎ বাবুর স্নেহ – শাসন, বিকাশ বাবুর বন্ধুত্ব, মাসিমার আদর। সব মিলিয়ে আমতলী- জয়গোপালপুর স্কুল জীবন, হোস্টেল-জীবনে আমরা বেশ ছিলাম।

কবে যে বারো টা শীত – বসন্ত – গ্রীষ্ম – বর্ষা পেরিয়ে এলাম ! রবী, র বাগুইআটিতে ব্যবসা, তুষারের পিয়ালিতে টেলর্সের দোকান, শেখর বারাসাতে, সরোজ সোনারপুরে, ধনঞ্জয় টাকী তে, দেবাশিষ SSKM এ চাকরী করছে, সুস্মিতা ও অঞ্জলি কোন্নগর ও দমদমের শিক্ষিকা। কাকলি ছেলে ও স্বামীর সঙ্গে সুখেই আছে। লতিকা- সন্ধ্যা তোরা কোথায় -কেমন আছিস? মনে পড়া সব নামের ভিড় পোস্টকার্ড বইতেই পারবে না। আর যাদের মুখ মনে আছে, নাম মনে নেই, ঘটনা মনে আছে,নাম কিছুতেই মনে করতে পারছি না, তোরাও তো আমাদের সেই ‘হাসি -খেলায়’ কম গান শোনাসনি। তোরা সবাই কোথায় কেমন আছিস রে? আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই যায়নি। আমাদের হাসি – গান, প্রথম প্রেমে সফলতা- ব্যর্থতার আনন্দ – কষ্ট কেউ কুড়িয়ে নেয়নি। সেদিনের ‘সব তারাই’ আছি হাজার ব্যস্ততার গভীরে।

আয় না! হাজার কাজের মাঝে একটু লেনদেন করি সেদিনের সঙ্গে এদিনের ভাল -মন্দ। দেখা নাইবা হোক বিজ্ঞানের দান MOBILE তো সবার কাছে আছে। FM এর এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমিও রইলাম সবার সঙ্গে না হলেও কারও – কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে।

১৯৯৯ সালের আমতলী – জয়গোপালপুর হাই স্কুলের মাধ্যমিকের ব্যাচের তরফ থেকে – ধীমান মন্ডল https://www.facebook.com/dhiman.mandal.758

আকাশবানী কলকাতার FM RAINBOW’র’ লাইভ রেকর্ডিং <<Download Link>>

সঞ্জয় হুমানিয়া
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বেঙ্গালুরু, ইন্ডিয়া