বাবাই এখন আর আগের মতো রেড মিট খেয়ে হজম করতে পারে না। যেদিনই খায়, সেদিনই তাকে হজমের ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারও নিষেধ করে দিয়েছেন, রেড মিট একদম বন্ধ রাখতে। বাবাইও খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। তবে নয় মাসে ছয় মাসে, যখন পুচুর সাথে বাইরে খেতে যায়, তখন একটু-আধটু মটন খায়।
শেষবার তারা মটন খেয়েছিল “Oudh Biryani” রেস্তোরাঁয়। সেদিনও বাবাই মটনটা হজম করতে পারেনি। পুচু তখন একটু আক্ষেপের সুরে বলেছিল, “তোকে আর বাইরের মটন খেতে দেবো না, যেদিন বাড়িতে রান্না হবে সেদিন খাবি।”
সেই থেকে গত আট-নয় মাস ধরে বাবাই আর বাইরের মটন খায় না, শুধু বাড়ির রান্না করা মটনই খায়। দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিয়ের পর তারা নিরামিষভোজী হয়ে যাবে। অনেকদিন সুস্থ থাকতে হবে, অনেকদিন একসাথে বাঁচতে হবে।
দুজনের পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। প্রথমে WhatsApp চ্যাট, তারপর ফোনে কথা। এখনো মাঝে মাঝে তারা সেই প্রথম লম্বা ফোন আলাপের দিনটা স্মৃতিচারণ করে। প্রায় তিন-চার ঘণ্টা একটানা কথা বলেছিলো সেদিন। সেখান থেকেই শুরু দুজনের বন্ধুত্বের।
আজ পুচু নিজে হাতে মটন রান্না করেছে। যদিও আজ রবিবার নয়, তবুও বাবাইয়ের বায়নাতে মটন হয়েছে। বাবাই বায়না ধরলো, ভাত দিয়ে মটন খাবে না, পরোটা লাগবে। যেমন আবদার, তেমন ইচ্ছে পূরণ।
মটন আর পরোটা খেতে খেতে বাবাই WhatsApp চ্যাটে পুচুকে বলল, “মটনটা অসাধারণ হয়েছে, তুমি রান্নার পরীক্ষায় ‘ক’ পেয়েছো।” পুচু খুশিতে একটা হাসিমুখের ইমোজি পাঠালো।
কিন্তু বাবাইয়ের পরের টেক্সটটা দেখে পুচুর মনটা ভরে গেল, “বিয়ের পরেই কি মটন খাওয়া ছেড়ে দেব? 🥹 বিয়ের দু-তিন বছর পর ছাড়লেই কি হবে না?”
পুচু টেক্সট পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেল। মনে মনে হাসল, মুখে সুখের অনুভূতি। ভাবলো, সম্পর্কটা কতটা মায়ার। দুজনের মধ্যে থাকা ভালোবাসা, যত্ন আর বন্ধুত্বটাই তো সম্পর্কটাকে এত সুন্দর করে রেখেছে।
উত্তরে পুচু লিখলো, “হ্যাঁ হবে। আমি যতরকম রান্না জানি, প্রথম দু’বছর তোকে খাওয়াবো তারপর সব ছেড়ে দেবো।”
আমার অনেক দিনের ইচ্ছে একটি প্রেমের গল্পের সিরিজ লেখার। সময় ও সুযোগের অভাবে হয়ে ওঠেনি। আজ এই মধ্যবয়সে এসে সেই পুরোনো ইচ্ছে পূরণ করা শুরু করলাম। গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোনো মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুমাত্র কাকতালীয়।
আগেও কয়েকটা ছোট গল্প লিখেছিলাম এই দুই চরিত্র নিয়ে। সেগুলো কোথায় হারিয়ে ফেলেছি জানি না। আজ এই ছোট গল্পকে প্রথম ধরে নিয়ে শুরু করলাম। ধারাবাহিকভাবে চলবে।