
বেঙ্গালুরু থেকে একদিনের মধ্যে গিয়েই ফিরে আসা যায় এমন জায়গাগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল নন্দী হিলস বা Nandi Hills. যতদূর চোখ যাবে ধূ ধূ করবে পাহাড়ের চূড়া। বাইকে বেঙ্গালুরু থেকে দেড় ঘণ্টার পথ, পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে আরও প্রায় আধ ঘণ্টা। মাত্র ৬০-৭০ কিলোমিটারের রাস্তা, যা নির্ভর করছে আপনি বেঙ্গালুরুর কোন যায়গা থেকে নন্দী হিলস যাচ্ছেন। হলফ করে বলা যায় সারা জীবন মনে থেকে যাওয়ার মতো দৃশ্য রয়েছে নন্দী হিলসে। এই পাহাড়কে আনন্দ গিরিও বলা হয়। আমরা ৬ জন সেদিন বেঙ্গালুরু থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম প্রায় ভোর ৫:৩০ এ।
সকালেও বেঙ্গালুরুতে রাস্তা তেমন ফাঁকা থাকে না। আমরা যখন রাস্তায়, আবছা কুয়াশা আর আকাশ মেঘলা। শহর থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে উঠেই আমাদের প্রথম ছোট ব্রেক। রাস্তার ধারে চায়ের দোকান, জলখাবার হিসাবে চা আর গুড ডে বিস্কুট। দিনটি রবিবার, আরো লক্ষ করলাম যারা চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে সকলেই বাইকার্স এবং সকলেই নন্দী পাহাড় নিয়ে কথা বলছে। যদিও আমি কন্নড় ভাষা বুঝি না, তবুও কথার মাঝে বার বার উঠে আসছিল কিছু হিন্দি ও ইংলিশ শব্দ, এবং নন্দী হিলস এর নাম। চায়ের দোকানে থাকতে থাকতেই দুই চার ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে গেলো। এখনে বেশ ঠান্ডা থাকে সকালের দিকে, সেদিন আবার বৃষ্টি। বেশ যেন শীতের সকালে মনে হচ্ছিলো। সব কিছুই যেন জমে ক্ষীর হয়ে যাচ্ছিলো।
আমরা NH44 ধরে সোজা Rani circle, তার পরে বাম দিকের Nandi Hills road ধরে সোজা Karahalli Cross. এখান থেকে আবার বাম দিকের Nelamangala – Chikkaballapura road ধরে Nandi Hills Cross Bus Stop। এখান থেকে ডান দিকের রাস্তা Nandi hills main road ধরে Nandi Hills Parking. রাস্তায় তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু আর নেই। ম্যাপ নিচে দিয়ে দিলাম, গুগোল হয়তো সেটা বর্তমান সময় হিসাবে দেখাবে।
আমরা যখন Nandi Hills Parking পৌছালাম তখন সকাল ৭:৩০, parking place এ তখন মেলা বসে গিয়েছে। সে এক হই হই কাণ্ড, কোন রকমে একটা যায়গা খুঁজে স্কুটি আর বাইক পার্ক করেই দাড়িয়ে পড়লাম টিকিটের লাইনে। প্রতি দুজনের আর বাইকের পার্কইন চার্জ হিসাবে টিকিট মাত্র ৪০ টাকা। মনে হচ্ছিলো কোনো এক শীতের সকাল। এখানে বাতাস খুব হাল্কা, বুক ভরে নিঃশাস নিলাম। লাইনের পাশেই ছোট্ট একটা পেঁয়াজির দোকান, দোকানের সামনে লোকের ভিড়। আমাদের একজন সেই ভিড় দেখে এগিয়ে গেলো আর ফিরে এলো এক খাঁমচা পেঁয়াজি নিয়ে। ছোট্ট খবরের কাগজের উপরে চৌক একটা সোলার বাটি, তাতে এক খাঁমচা পেঁয়াজি। কাছে আসলে গুনে দেখলাম মাত্র ৬ পিস পেঁয়াজি, দাম মাত্র ৫০ টাকা। প্রথম প্রথম বেঙ্গালুরু এসে এটা খুব দামী শহর মনে হবে, তবে ধীরেধীরে এটা গাসওয়া হয়ে যাবে।
টিকিট নেওয়ার পর, এখান থেকে পায়ে হেটে চড়তে হবে নন্দী হিলস। প্রথমে পড়বে Sunset view point, তার পর যথা ক্রমে Nandi hills police station, children play park, Nandi hills north view point, Nandi hills cave, food court হয়ে আবার children park. চেষ্টা করবেন এখানে ভোর ভোর আসার, এখানে সূর্য উদয় খুব সুন্দর দেখা যায়। এখানে এটাই প্রধান আকর্ষণ। আমার এই সূর্য উদয় দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কারন এই সেই আকাশ ছিল মেঘলা। পাহাড় চড়ার পথে আপনাকে একটু খাঁড়াই চড়তে হলে, একটু কষ্ট হয়তো আপনি পাবেন, তবে মনে থাকবে নতুন কিছু দেখার আনন্দ। আবার ফেরার সময় কষ্ট কম হবে আর সঙ্গে থাকবে অনেক মিষ্টি স্মৃতি। যতটা সম্ভব আমরা এই সুন্দর স্মৃতি ছবিতে তুলে রাখার চেষ্টা করেছি। হয়তো অনেক বছর পরে আবার আসবো এই নন্দী হিলস। বেঙ্গালুরু থেকে নন্দী হিলস বেড়িয়ে যদি ঘরে ফিরতে না ইচ্ছা করে, তবে আপনি আভালাবেত্তা পাহাড় বা Avalabetta যেতে পারেন। আমরাও তাই করেছিলকম। আভালাবেত্তা পাহাড় নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা লিখেছি অন্য পোষ্টে।
Avalabetta Hill | আভালাবেত্তা পাহাড়
Nandi Hills again | দ্বিতীয় বার নন্দী হিলস ভ্রমণ নিয়ে আমার পরের ব্লগের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম পরের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ওখানে পাবেন।
কোলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন?
যেকোনও ট্রেনে বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে গাড়িতে। হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার সবচেয়ে ভালো ট্রেন দুরন্ত এক্সপ্রেস। সোম আর বৃহস্পতিবার বাদে সকাল ১১টায় হাওড়া থেকে ছেড়ে যশোবন্তপুর পৌঁছাতে হবে পরদিন বিকেল ৪টেয়।
ফটো অ্যালবাম
[foogallery id=”7619″]
সঞ্জয় হুমানিয়া
৮ই জুলাই ২০৮১, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, ইন্ডিয়া
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★