আজও যখনই কোনোএক শীতের সকালে স্নান করতে যাই, ঘটনাটা মনে পড়ে যায়। গামছা হাতে নিয়ে মাথায় তেল মাখতে মাখতে দুমিনিট নিজের মনে হেসে নিই। হাসি পাওয়ারই কথা, ঘটনাটাই এমনই যে মনে পড়লেই হাসি পায়। ২০০৭ বা ২০০৮ এর কথা, আমি তখন কলেজে পড়ি। মেসে থাকি কলেজের বন্ধুদের সাথে। সকাল সকাল স্নান করে মেসের গরম ভাত খেয়ে কলেজ যাই। সকালে মেসে ভয়ানক হুড়োহুড়ি বেধে যেত স্নান করা নিয়ে। সকলেই ঘুম থেকে দেরি করে উঠে প্রায় একই সময় স্নানের জন্য দৌড়োদৌড়ি করতো। মেসে একটাই বাথরুম আর আমারা প্রায় ৭/৮ জন।
প্রায় রোজ সকালেই বাথরুমের সামনের বারান্দার গ্রিলে গা ঠেকিয়ে আমাদের জটলা চলতো। কলেজের কেচ্ছা কেলেঙ্কারি, হাসি ঠাট্টা, এর ওর নিয়ে ইয়ার্কি এই সব ছিল জটলার উপাদান। এর মধ্যে আমাদের কলেজের সহপাঠী ‘অপূর্ব’ মাঝে মধ্যেই আড্ডার মধ্যে ফোঁড়ন দিয়ে আড্ডা কে জমজমাট করে তুলতো। একদিন স্নান নিয়ে জটলা চলছে। অপূর্ব খেই ধরে ফোঁড়ন দেওয়া শুরু করলো। বেশ রসিয়ে রসিয়ে সে স্নান কয় প্রকার ও কি কি তা আমাদের বোঝাতে শুরুর করলো।
প্রথম হলো ছিটকে স্নান, এই ধরণের স্নান করতে অল্প কয়েকটা জল বিন্দু নিয়ে নিজের উপরে ছিটিয়ে নিয়ে, মুখ ধুয়ে নিলেই স্নান হয়ে যায়। দ্বিতীয়টি হলো কল নমস্কার স্নান, এই স্নানে জলের কল কে দূর থেকে নমস্কার করে নিলেই স্নান সম্পূর্ণ হয়। তৃতীয় হলো স্বপ্ন স্নান, এটি একটি উচ্চমানের স্নান, এতে লেপ কম্বলের ভিতর থেকে না বেরিয়ে শুধুমাত্র জল বা স্নান করার কথা স্মরণ বা স্বপ্ন দেখলেই স্নান করা সম্ভাব্য হয়। আর সর্বশেষ হলো স্পর্শ-অনুভূতি স্নান, এতে স্নান করা কোন এক ব্যক্তিকে স্পর্শ করে একটি গোপন মন্ত্র বলা মাত্রই স্নান হয়ে যায়।
তবে, অপূর্বর মায়ের কাছে নাকি এসব চালাকি খাটে না। একবার কোন এক শীতকালে সে প্রায় একদিন অন্তর একদিন স্নান করা শুরু করেছিলো। কিন্তু প্রতিদিন গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢুকতো। মাকে ফাঁকি দিতে সে অল্প জলে হাত, মুখ আর মাথা ভিজিয়ে মুছে নিতো। গায়ে জল ঢালতো না। তবে বালতি থেকে মগে জল নিয়ে এক বিশেষ কায়দায় জল ঢেলে আওয়াজ তৈরি করতো, যাতে বাইরে থেকে বোঝা যায় যে সে স্নান করছে। বেশ চলছিলো কয়েক সপ্তাহ ধরে। কিন্ত শেষরক্ষা হলো না। মা ধরে ফেললেন যে সে স্নান করে না। একদিন স্নান করে যেই বেরিয়েছে, ওমনি মা দৌড়ে এসে অপূর্বর কোমরের কার হাতে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলো। খটখটে শুঁকনো কার। সেদিন আবার বাথরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা জলে সত্যি সত্যি তাকে স্নান করতে হয়েছিলো।
গল্পের এমন পরিণাম শুনে সবাই আমারা একটু চুপসে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপূর্ব, ফিক করে হেসে বললো, তার পরেও নাকি মায়ের চোখে ধুলো দিয়ে একদিন বাদ একদিন স্নান করতো। সে এক নতুন ফন্দী বার করেছিলো। হাত, মুখ, মাথা ধুয়ে নেওয়ার পরে হাতে একটু জল নিয়ে শুধু মাত্র কোমরের কার ভিজিয়ে নিতো। অপূর্বর মুখের কথা শেষ হতে না হতে সবাই হোহো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলো।
সত্যি, অপূর্ব !! অপূর্ব !!
সঞ্জয় হুমানিয়া
১৩ মে ২০১২, আওরঙ্গবাদ, মহারাষ্ট্র, ইন্ডিয়া
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★
