রোজ সন্ধ্যায় একটি সাধারণ মপেডে করে এক কচুড়িওয়ালা নিঃশব্দে আমাদের ঘরের সামনে দিয়ে চলে যেত। তার কোনো জোরালো বিজ্ঞাপন নেই, কোনো চমকপ্রদ ডায়লগও নেই। যদি আগে থেকে না জানতেন, তাহলে কেউই বুঝতে পারত না যে এই লোকটি কচুড়ি এবং সামসা বিক্রি করে। মপেডের পেছনে একটি বড় অ্যালুমিনিয়ামের গোল ঢাকনাওয়ালা কৌটা নিয়ে সে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়।
প্রথম দিন তার সন্ধান পাই আমাদের পাশের গলিতে, যেখানে ৪-৫ জন ক্রেতার সামনে সে কচুড়ি সাজাচ্ছিল। টক ঝাল চাটনি, পুদিনা পাতার চাটনি, পেঁয়াজ কুচি, টক দই এবং ভাজা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাত্র ১০ টাকায় কচুড়ি বিক্রি করছিল। আমিও কিনলাম দুটি কচুড়ি।
গতকাল, ৩ তলার জানালা দিয়ে আবিষ্কার করলাম, কচুড়িওয়ালা আমাদের গলিতেও আসে, ঠিক সন্ধ্যা ৭:৩০-এ। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে তাকে আর দেখতে পেলাম না।
আজ আমি রীতিমতো প্রস্তুত হয়ে গলির মোড়ে অপেক্ষায় ছিলাম। ৭:৩৫ বাজতেই ঘড়-ঘড় শব্দ করে কচুড়িওয়ালা হাজির। আমাকে দেখেই চোখের ভাষায় বুঝে নিলো, আমি তার প্রতীক্ষায়। রজনীকান্ত স্টাইলে মপেড দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “সামসা না কচুড়ি?” আমার উত্তর, “অবশ্যই কচুড়ি।”
দুটি কচুড়ি সাজাতে সাজাতে ৩ মিনিট সময় নিলো। এই সময়েই আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে এক জায়গায় একটু বেশি সময় দাঁড়ায় না কেন? না দাঁড়ালে ক্রেতা কিভাবে পাবে? উত্তরে সে বললো, “এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কচুড়ি বেচতে ভালো লাগে না, আর ক্রেতা আমি পেয়েই যাই, যেমন তোমাকে পেলাম।”
রোজ সে ৫০০ কচুড়ি আর সামসা বিক্রি করে। বেঙ্গালোরের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার রেডিয়াস জুড়ে সে ঘুরে বেড়ায়।
আজ সে বললো, “কাল থেকে তোমাদের গলিতে এলেই একটা হর্ণ দিয়ে জানিয়ে দেবো।” 😊
এই কচুড়িওয়ালার গল্পটি শুধুমাত্র একটি বিক্রেতার নয়, এটি একজন উদ্যোক্তার গল্প, যিনি প্রতিদিন পরিশ্রম করে নিজের জায়গা খুঁজে নিয়েছেন। তার এই পরিশ্রম, অধ্যবসায়, এবং একাগ্রতা আমাদের শেখায়, জীবনে সফলতা পেতে হলে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে এবং নিজের প্রতিটি সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। যেমন তিনি এক জায়গায় থেমে না থেকে সব জায়গায় নিজের পণ্য পৌঁছে দেন, তেমনই আমাদেরও জীবনের প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে এবং কখনো হাল ছাড়তে হবে না।
সঞ্জয় হুমানিয়া
২৭ মার্চ ২০১৭, বেঙ্গালুরু, ইন্ডিয়া