Share this post:

ট্রেনের গপ্পো – ১

ট্রেনের দুলুনি চোখ বন্ধ করে উপভোগ করার অজুহাতে ঝিমাচ্ছিলাম। তন্দ্রা ভাঙলো কাঁধ ঝাকুনিতে। মুখ তুলে চোখ খুলে দেখলাম ট্রেনে মধ্যাহ্নভোজনের অর্ডার নিতে এসেছে। ভদ্দর লোক হিন্দীতে জিজ্ঞাসা করলো আমি ভেজ না নন ভেজ খাবো। আমি ঘুমের ঘোর কাটিয়ে নিজেকে একটু চালাক দেখানোর জন্য জিজ্ঞাসা করলাম ভেজ আর নন ভেজে কি আছে আর কার কতো দাম।

ভদ্দর লোক, গড়গড় করে মেনু আর দাম বললো। মাত্র ২০ টাকার ব্যবধান। সুতরাং নন ভেজে অর্ডার দিলাম। অর্ডার নিয়ে ভদ্দর লোক কাগজে লিখে নিয়ে চলে গেলেন।

দুপুরে খেতে খেতে হিসাব করলাম দু দিন তিন বার খাবো, আর তাতে কতো বিল হবে। খাওয়ার পরে মানিব্যাগ খুলে দেখে নিলাম টাকা আছে কি না। হা, আছে।

হঠাৎ খেয়াল পড়লো, আরে !!! আমি তো টিকিট কাটার সময় নন ভেজ select করেছিলাম এবং তার দামও দিয়েছিলাম। তাহলে তো আর এখন টাকা দিতে হবে না। দুরন্ত ট্রেনে তো এই ব্যবস্থা। ভালোই হলো তাহলে।

কিন্তু সমস্যা হলো, দুপুরে ভদ্দর লোক কে দাম জিজ্ঞাসা করে ফেলেছিলাম। সে হয়তো ভাবছে আমি হয়তো আবার দাম দেবো খাবারের। তার হাব ভাব দেখেও তাই মনে হচ্ছে। যখনই আমাদের কামরায় আসছে, তখনই আমার দিকে চেয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিচ্ছে। রাতে খাবার দিতে এসে একটা সোন পাঁপড়ি extra দিয়ে গেলো।

তাহলে কি লোকটা, আমাকে বোকা ভাবছে!! আমার এখন কি করা উচিৎ!! আমাকে কি আরো চালাক হওয়ার অভিনয় করতে হবে!!

ট্রেনের গপ্পো – ২

অন্যদের কথা চিন্তা করে ট্রেনে অন্তত ডিম খাওয়া উচিৎ না যদি হজম ক্ষমতা কম হয়, আর রাতে তো খাওয়াই উচিৎ না। কিছু মানুষ আছেন যারা হালাল চিকেন না হওয়ার সন্দেহে কোনো চান্স না নিয়ে ডিম ভাত অর্ডার করেন। আমার সহযাত্রীও সেটাই করলেন।

সাদা আলো নিভিয়ে নীল আলো জ্বালিয়ে সকলে শুয়ে পড়েছে। দূর থেকে ভেসে আসছে “খাইরুল লো তোর লম্বা মাথার কেশ” কারো ফোনের স্পিকার থেকে। স্লিপারে বড্ডো গরম। টাকা বাঁচাতে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল বসিয়ে ফেলেছি। শুয়ে শুয়ে এই সব সাত পাঁচ ভাবছি, ওমনি ডিম নিজের অস্তিত্ত্ব প্রকাশ করলো।

আশেপাশে উনিই এক মাত্র ডিম ভাত খেয়েছেন রাতে। এমনি সময় ছাদে লাগানো পাখা হওয়া না দিয়ে শুধুই শব্দ দিচ্ছিলো। কিন্তু এবার সত্যি সত্যি সে প্রমাণ করে দিলো যে সে হওয়াও দিচ্ছে। পুরো কামরা ডিম হজম না হওয়ার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দিলো। এক বার, দু বার, তিন বার। ঠিক পাঁচ থেকে সাত মিনিট অন্তর অন্তর।

যেই বাতাস একটু স্বাভাবিক হচ্ছে, ওমনি আর একটা বোমা। নাহ!! এ তো সহ্য করা যায় না। সবাই নিজের ব্যার্থ এ নড়েচড়ে সুচ্ছে। কামরার নীল আলোতে তখন চোখ সয়ে গেছে। আশপাশ দেখা যাচ্ছে। এক মাত্র ডিম ভাত খাওয়া ভদ্দর লোক মরার মতো শুয়ে আছে। কোনো নড়াচড়া নেই।

ধৈয্যের বাঁধ ভেঙে কে একজন বলে উঠলেন, ” একটু উঠে গিয়ে গেটের কাছে গিয়ে ছেড়ে আসতে পারতেন তো”। চতুর্থ বার আর কিছু হলো না। এর মধ্যে কেউ একজন deo sprey করেছেন কামরায়। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

সকাল পাঁচটায় ঘুম ভাঙলো। breakfast দিলো সকাল আটটায়। breakfast এ দুটি ডিম সেদ্ধ, bread butter, টমেটো কেচাপ আর চা। আমি জনদরদী মানুষ। ডিম দুটো রেখে দিলাম, ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে আলু দিয়ে ঝোল করবো রাতে।

ট্রেনের গপ্পো – ৩

আমার মতো যারা দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়াত করেন আর যাদের অপার বার্থ পছন্দ, তারা হয়তো অনেকেই আমি যা দেখেছি আপনারাও তাই দেখেছেন। রাতে যখন অপার বার্তে শুয়ে শুয়ে ঘুম আসে না, তখন চোখ চলে যায় এই সব কুটির শিল্পের দিকে। যদিও এগুলোকে কুটির শিল্প বলা যায় না। এগুলিকে আমার ট্রেন শিল্প নাম দিতেই পারি।

গুটখা খেয়ে প্যাকেট ট্রেনের ছাদে এদিক ওদিক গুঁজে রাখা। চাবি দিয়ে ঘোষে টেরাবেকা হাতে A+R= লেখা। অচেনা কোনো এক ফোন নম্বর লেখা call me বলে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনেক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা পুরোনো বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। বাটা কোম্পানির বিজ্ঞাপন। ধনুষ্টংকার হইতে সাবধান, জুতা পরুন। নিজের পা কে অক্ষত রাখতে মানুষের জুতো পরা। কথায় বলে লাখ টাকার জুতো হলেও পায়ের নিচে থাকে। ট্রেনে কিন্তু এই জুতো লাখ টাকার না হয়েও উঠে পড়ে মাথায়।

যে জুতো রণে বনে জলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, যে জুতো ট্রেনের ভেজা নোংরা শৌচাগারে অবাধ বিচরণ করে, সেই জুতোই আবার উঠে পড়ে মাথায়। আমি বহু মানুষ কে দেখেছি ট্রেনের কামরায় ফ্যানের উপরে নোংরা জুতো তুলে রাখতে।

তার জুতো সে রাখুক, আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই শরীরটা ঘিনঘিন করে ওঠে। ফ্যান উপরের বাতাস টেনে নীচে নামিয়ে দেয়। যখন ওই নোংরা জুতো ফ্যানের উপরে উঠে, তখন ফ্যান সেই নোংরা হওয়ার সাথে মিশিয়ে ছড়িয়ে দেয় যাত্রীদের উপরে।

আমি বললাম, ভাই জুতোটা সিটের নীচে রাখুন, কেউ নেবে না। উত্তরে সে তার গুটখার পিক ফচ করে অর্ধেক জানলা অর্ধেন চলন্ত ট্রেনের বাইরে ফেলে রঙিন দাঁড় দেখিয়ে বললেন,

“চুরি হয়ে গেলে আপনি কিনে দিবেন?”

সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
২৭সে অগাস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।

★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★

Share this post:
Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *