কিছুটা স্মৃতি আর কিছুটা ইন্টারনেটের উপরে ভরসা করে অভিজ্ঞতা লিখতে বসলাম। সে বার হায়দ্রাবাদে একটা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কোন একটা ঝামেলার জন্য পরীক্ষা এক সপ্তাহ পিছিয়ে গিয়েছিলো। তিন বন্ধুর মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে গেলো। বাড়ি না ফিরে আমারা পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের শহর দেখাতে, মুম্বাই। জীবনে প্রথমবার মুম্বাইয়ে এলাম, তাও আবার লুকিয়ে। হায়দ্রাবাদ থেকে রাতের ট্রেন ধরে ভোরে পৌঁছে গেলাম, যখন স্বপ্নের শহর স্বপ্নের মধ্যে। হাতে মাত্র একদিন, সন্ধ্যায় আবার গোয়া যাওয়ার প্লান! ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস এর বাইরে পা দিয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ট্রেন স্টেশন যে এত সুন্দর হয় এই প্রথম মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস থেকে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া পর্যন্ত হেঁটেই মেরে দিলাম। চোখ ভরে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া দেখলাম, দেখলাম তাজ মহল প্যালেস হোটেল। শুনেছিলাম এখানে নাকি বড়োলোকেরে হাজার হাজার টাকা খরচ করে চা খায়। গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সামনে ছবি তুললাম আর পায়রা ওড়ালাম। তার পর? এবার কি করবো কোন idea নেই। কোথায় যাবো বা কি দেখবো কোন প্লান নেই। তবে যাই করি তাই করি, সন্ধ্যায় বাস ধরে মুম্বাই টু গোয়া।
ওখানে ঘোরাঘুরি করতে করতে কানে এলো গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া থেকে লঞ্চ করে এলিফ্যান্টা গুহা নামে একটা দেখায় যায়গা আছে। গুগোলে জেনে নিলাম এলিফ্যান্টা গুহা সম্পর্কে। সকলে সম্মতি জানালো, ওখানে যাওয়া যেতে পারে। গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে আরব সাগরের মাঝে ছোট দ্বীপ এলিফ্যান্টার অবস্থান৷ এর আদি নাম ছিল Gharapuri অর্থ the city of caves বা Pory Island বা গুহার শহর। পর্তুগিজ জমানায় ১৫৩৪ সালে অঞ্চলটি আবিষ্কৃত হয়। দুটো পাহাড় নিয়ে ৫০০ ফুট উচ্চতার এলিফ্যান্টা কেভ অনেকটা হাতির মাথার মতো, ওই জন্য হয়তো এর নাম এলিফ্যান্টা গুহা হয়েছিলো। ১৯৭০ সালে গুহাটি নতুন করে সংস্কার করা হয় এবং এখন এটি ইউনেসকোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’। https://whc.unesco.org/en/list/244/
এই দ্বীপে রয়েছে সাতটি ছোট বড় গুহা যেগুলি পাথর কেটে বানানো হয়েছিল আনুমানিক ৫০০-৬০০ খ্রিস্টাব্দে। গুহা গুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়৷ বুদ্ধ গুহা ও হিন্দু গুহা। এখানে দুটি বুদ্ধ গুহা ও বুদ্ধ স্তূপ আছে, গুহা দুটির একটি অসম্পূর্ণ৷ অন্য দিকে পাঁচটি হিন্দু গুহা আছে৷ শিলালিপি অনুযায়ী দ্বিতীয় পুলকেশীর সময়কালে এই গুহাগুলির নির্মাণ হয়েছিল নাবিকদের আশ্রয় এর জন্যে।
প্রতিবছর ফ্রেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম এলিফ্যান্টা উত্সবের আয়োজন করে৷ এমনি সময় এলিফ্যান্টা কেভ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা, ছবি তোলার জন্যে কোনো আলাদা টাকার প্রয়োজন নেই তবে ভিডিও করা নিষেধ। ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এলিফ্যান্টা কেভ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। গরম ঋতুতে অসহনীয় গরম পড়ার কারনে ভ্রমণ উপভোগ্য থাকে না আর বর্ষায় সাগর অনেক উত্তাল থাকায় লঞ্চ ভ্রমণটা ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। কিভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন মুম্বাই যায়৷ টাকা থাকলে বিমানেও যেতে পারেন৷ মুম্বাই এর গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে ২০০ টাকার রাউন্ড ট্রিপের ভাড়া দিয়ে লঞ্চ করে যেতে হয় এলিফ্যান্ট কেভে। লঞ্চ প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট যেতে ও আসতে লাগে। জেটিঘাট থেকে গুহা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য টয়ট্রেনের ব্যবস্থা আছে৷ তবে আমারা যখন গিয়েছিলাম তখন টয়ট্রেন খারাপ ছিল, আমাদের পায়ে হেটে যেতে হয়েছিলো। সতর্ক বানী, এই দ্বীপে প্রচুর বাঁদর রয়েছে, আর সুযোগ পেলেই বাঁদরামি করে। অতএব হাত ব্যাগ বা খাবার সাবধানে রাখবেন। বাঁদরের সাথে আপনি বাঁদরামি করলে হয়তো বাঁদরের হাতে স্বজোরে চড় ও খেতে পারেন।
সঞ্জয় হুমানিয়া | বেঙ্গালুরু, ভারত
১০ই জুলাই ২০১১
★ আমার লেখায় অজস্র বানান ভুল থেকে যায়, পাঠকের চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ★